লিমন হাসান,বুটেক্স প্রতিনিধি।
বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির সাথে পাল্লা দিয়ে কাগজ দাম বেড়েই চলেছে। সেই সমস্যা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে কচুরিপানা থেকে কাগজ তৈরি করেছে বুটেক্সের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চার শিক্ষার্থীর একটি দল।
শিক্ষার্থীদের তৈরিকৃত কাগজের বিশেষত্ব হচ্ছে শতভাগ রাসায়নিকমুক্ত, শতভাগ পরিবেশ বান্ধব, ব্যবহারের পর পচনশীল। এসব কারণে এ কাগজ পরিবেশের কোনো ক্ষতিসাধন করে না। তাছাড়া এ কাগজ তৈরিতে সাধারণ কাগজের চেয়ে কম খরচ পড়ে। এ কাগজ দিয়ে শপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের প্যাকেজিং ব্যাগ তৈরি করা সম্ভব।
এ বিষয়ে দলের এক শিক্ষার্থী তাশকীন রাকিব জানান, ‘আমরা জানি, সাধারণত কাগজ প্রস্তুত করা হয় সেলুলোজ থেকে। আর সেলুলোজ এর প্রধান উৎস হলো গাছ। এই সেলুলোজ সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়তই গাছ কাটা হচ্ছে। কাগজের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে একটি দেশের পুরো আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন যেখানে আমাদের দেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ ১৮ শতাংশেরও কম। যা এখন একটি আশংকাজনক পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হবার জন্য আমাদের দরকার গাছের ওপর থেকে চাপ কমানো। সেক্ষেত্রে কাগজ বানানোর জন্যে সেলুলোজের প্রধান উৎস হিসেবে গাছের বিকল্প হতে পারে কচুরিপানা। কচুরিপানা সেলুলোজসমৃদ্ধ একটি জলজ উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদে লিগনিনের পরিমাণ গাছের তুলনায় খুবই কম যার কারণে কাগজ তৈরিতে লিগনিন নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয় না। কাগজ প্রস্তুতকরণে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি।যার ফলশ্রুতিতে এই কাগজ প্রস্তুতকরণে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি। কেমিক্যাল এর ব্যবহার না থাকার কারণে একদিকে যেমন স্বল্প খরচ ও সহজ প্রক্রিয়ার এই কাগজ বানানো সম্ভব তেমনি এটি পরিবেশের ওপরও তেমন কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে না। সুতরাং এই কাগজ সম্পূর্ণ কেমিক্যালমুক্ত এবং পরিবেশ বান্ধব একটি পণ্য।’
তৈরিকৃত কাগজ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কাগজ প্রস্তুত করার পর এর কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা হয়েছে। যেমন বাল্ক প্রোডাকশন এর জন্য এমন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া নির্ধারণ করা, দ্রুত প্রজনন উপযোগী জলাশয় এবং আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা। সময় স্বল্পতার কারণে যা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। উক্ত সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে এই কাগজের বানিজ্যিকীকরণে আর কোনো বাধা থাকবে না।দলের চার শিক্ষার্থী হলেন, বুটেক্সের চতুর্থ বর্ষের ইজাজ মাহমুদ, তাশকীন উদ্দীন রাকিব, ফাইজুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন। তারা প্রত্যেকে একই বিভাগের শিক্ষার্থী।