২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের হামলায় ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি অভিযোগ আনার ব্যাপারে বিচার বিভাগকে সুপারিশ করেছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের হাউস সিলেক্ট কমিটি।
প্রশ্ন হলো, এসব অভিযোগ আনা হলে ট্রাম্পের কী হবে? তিনি কী করবেন এরপর এবং কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ? ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনার সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো, সরকারি কার্যক্রমে বাধা দেয়া, রাষ্ট্রকে ধোঁকা দেয়ার ষড়যন্ত্র, মিথ্যা বক্তব্য দেয়া ও সমর্থকদের বিদ্রোহে প্ররোচিত করা, সহযোগিতা করা এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়া। তবে ট্রাম্প এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করলেই কি ‘বিপদ’ পিছু ছাড়বে?
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভিসের (প্রতিনিধি পরিষদ) ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সিলেক্ট কমিটির এ সুপারিশ মানতে বাধ্য নয় মার্কিন বিচার বিভাগ। তবে ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য জেমি রাসকিন বলছেন, এসব সুপারিশের বিপরীতে প্রচুর প্রমাণ তাদের হাতে আছে। তবে ক্যাপিটল হামলার ঘটনায় কংগ্রেস একাই তদন্ত করছে না, এ ব্যাপারে বিচার বিভাগের পৃথক তদন্তও চলমান।
বিচার বিভাগের তদন্তে কী ফলাফল আসবে তা বিবেচনার বাইরে রেখেও বলা যায়, যদি সিলেক্ট কমিটির সুপারিশ করা অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয় তবে ট্রাম্পকে কয়েক কোটি ডলার জরিমানা, এমনকি তার ২০ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে।
কংগ্রেসের কোনো ক্ষমতা নেই ট্রাম্পের অপরাধের বিচার করার। এই ক্ষমতা এককভাবে মার্কিন বিচারবিভাগের হাতে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, কংগ্রেস কমিটি তাদের কাছে থাকা প্রমাণাদি বিচার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলে মামলা অন্যদিকে মোড় নিতে পারে এবং এমনটি হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
তবে প্রমাণাদি হস্তান্তর এবং অভিযোগ আনার সুপারিশ করার মধ্যেই কংগ্রেসের সিলেক্ট কমিটির কাজ শেষ। এর বাইরে তাদের কিছু করার নেই। এরপর যা করার সব করবে দেশটির বিচার বিভাগ।
তবে কংগ্রেস কমিটির ক্ষমতা নেই ভেবে স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই ট্রাম্পের। কারণ, মার্কিন বিচার বিভাগও কংগ্রেস কমিটির দেখানো পথেই হাঁটছে। এরই মধ্যে তারা ট্রাম্পের বেশ কয়েকজন সহযোগী, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার কৌশলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল। কংগ্রেস কমিটি তদন্তের স্বার্থে যেসব নথি তলব করেছিল, বিচার বিভাগও সেসব নথি তলব করেছে।
গত মাসেই মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যারিক গারল্যান্ড ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের হামলায় ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি দেখভাল করতে জ্যাক স্মিথ নামে এক কৌসুঁলিকে নিয়োগ দিয়েছেন। এরপর থেকেই দারুণ তৎপরতা দেখাচ্ছে জ্যাক স্মিথের কার্যালয়। তারাও নতুন তদন্তে ট্রাম্পের সহযোগী, নির্বাচনী প্রচার কৌশলবিদদের ডেকেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। নথিপত্রও তলব করেছে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় নথি নিজ বাড়ি মার-এ-লাগোয় নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে রেখে দেয়া, জর্জিয়ার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সবমিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আগামী বছরটি গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ আগামী বছরই মূলত ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের বছর। ফলে যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত ও বিচার শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ট্রাম্পের স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। কারণ তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের তদন্ত এবং বিচার যতদিন চলমান থাকবে, ততদিন ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হতে থাকবেন এবং এসব শিরোনাম যে তার জন্য ইতিবাচক হবে না তা সহজেই অনুমেয়।
বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। ট্রাম্প যে কেবল আইনগত দিক থেকেই বাধার মুখে তা নয়। তার ঘরেও রয়েছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। রিপাবলিকান নেতা রন ডিস্যান্টিস দারুণভাবে উঠে আসছেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড ল কলেজের গ্র্যাজুয়েট রন ডিস্যান্টিস এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ-বৈদেশিক সমস্যাবলী নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার এবং এসব বিষয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যা এরইমধ্যে জনসাধারণের কাছে যথেষ্ঠ আস্থা অর্জন করেছে।
গত ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত গ্যালপের এক জরিপ বলছে, ৬৫ শতাংশ মার্কিন নাগরকিই ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ চান না। ফলে ঘর তো বটেই, জনগণের মধ্যেও ট্রাম্পের প্রতি আস্থা কমেছে।
সবমিলিয়ে বিবেচনা করলে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সিলেক্ট কমিটির অভিযোগ তার জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেবে। বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে তো সুবিধা দেবেই, নিজের ঘর রিপাবলিকান পার্টিতেও তার জায়গা নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। তাই নতুন বছরের শুরুতেই যত দ্রুত সম্ভব ট্রাম্প তার গায়ে লেগে থাকা সব অভিযোগের কালিমা মুছে ফেলতে চাইবেন বলেই ধারণা করা যায়। সময় নিউজ/তথ্যসূত্র: বিবিসি, এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট