মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজ নিয়ে বিব্রত বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পণ্য নিয়ে আসা জাহাজটিকে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সেইসঙ্গে রাশিয়ার এমন কাণ্ডকে অপ্রত্যাশিত এবং অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা করে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, অনন্য দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঝুঁকিতে ফেলে এমন কিছু রাশিয়া বা কোনো দেশের কাছেই আশা করেনা বাংলাদেশ। উন্নয়নসহযোগী হিসেবে রাশিয়াকেও যৌক্তিক উপায়ে পাশে চায় ঢাকা।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজটিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেটির বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার দেওয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত ছিলনা। জাহাজটি প্রবেশ করলে বাংলাদেশও ঝুঁবিতে ছিল। রাশিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশ এমন কিছু আশা করেনা যাতে করে উভয় দেশের আগামীর সম্পর্কটা টেবিলে গড়ায়। এতে করে চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যেমন নতুন প্রভাব পড়বে, তেমনিভাবে উভয় দেশের উন্নয় সহযোগিতা বাধাগ্রস্থ হবে। বৈশ্বিক চলমান পরিস্থিতিতে যথেষ্ঠ সতর্কতার সঙ্গেই বাংলাদেশ তার জনগণের কল্যাণে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটাকে কোনো দেশ যদি তাদের পক্ষ অথবা বিপক্ষে ধরে নেয় সেটাও সুচিন্তিত এবং সঠিক হবেনা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৪ ডিসেম্বর রূপপুর প্রকল্পের পণ্য নিয়ে আসার কথা ছিল। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার ‘স্পার্টা-৩’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘উরসা মেজর’ রাখা হয়। নাম পরিবর্তন করলেও জাহাজের আইএমও নম্বর একই থাকার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আসলে ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে অবহিত করে দেশটি। পরে রাশিয়াকে তার জাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
এ ঘটনায় ২২ ডিসেম্বর হঠাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টিটস্কি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলমের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সচিব সে সময় এই ঘটনা সম্পর্কে কিছু না বললেও কিছু বিষয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ইস্যুগুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় দু’পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য বা বিজ্ঞপ্তি প্রচার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টেটস্কিও গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যান।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জাহাজটিকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য দুই দফা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিস্কার করা হয়েছে যে, জাহাজকে কোনভাবেই জলসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না এবং জাহাজটিকে ফিরে যেতে হবে। এমন প্রতিউত্তরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অপর চিঠিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ামূলক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাহাজটি আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল সেটি জানা ছিল না। এখন যেহেতু নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানা হয়েছে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য টেলিফোনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যে করতে রাজি হননি। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলাপের পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের সভা-সমাবেশের অধিকার, সুষ্ঠ নির্বাচন প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক কাঠামো নিয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক এমন সময়ে বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই বলে বিবৃতি দিয়েছিল রাশিয়া। আর এ কর্মে ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ ও জার্মান রাষ্ট্রদূতও যুক্ত রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়াকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সঙ্গে তুলনা করেছিল রাশিয়া।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসও প্রশ্ন তুলেছে, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসরণ করে রাশিয়া অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর থাকার বিষয়টি তারা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছিল কি না। ঢাকা কেন্দ্রিক উভয় দেশের চলমান এ ঘটনার মধ্যে রুশ জাহাজ ফিরিয়ে দেওয়া বাংলাদেশের উপর এক ধরণের চাপ যে সৃষ্টি হচ্ছে তা নিয়েও ভাবনায় ঢাকার কূটনীতিকরা। আমাদের সময় ডটকম