বাঘারপাড়ার বাঁকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস দূর্ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৫০ জ০ন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় এ দূর্ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী,অভিভাবকরা তিনটি বাসযোগে পিকনিকে গিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সেখান থেকে ফেরার পথে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে একটি বাস দূর্ঘটনায় পড়ে। দূর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জ০ন আহত হন।
পিকনিকের একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে আরেকটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারালে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এসময় গাড়ির চালক ঘটনাস্থলে, অভিভাবক সদস্য বিদ্যুৎ বিশ্বাস কাশিয়ানি হাসপাতালে ও স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস যশোর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। আহতদের ২৭ জনকে রাতে ভর্তি করা হয় যশোর জেনারেল হাসপাতালে। চারজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ৪১ জনকে দেয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসা।
রাত ১০ টার পরে আহতদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ও প্রাইভেটকার হাসপাতালে আসতে থাকে। দুর্ঘটনার খবর শুনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শ’শ’ মানুষ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি স্বউদ্যোগে আহতদের রক্ত দিতে এগিয়ে আসে।
নিহতদের মধ্যে দু’জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বিশ্বাস (৫০)। তিনি বাঁকড়ি গ্রামের গোকুল চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। অপরজন স্কুলের ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস। আহতদের মধ্যে রাতে পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা যায়। তারা হলেন, নিরঞ্জন বিশ্বাস, সীমান্ত কুমার, কর্মচারী বাগচী, আনোয়ার হোসেন ও ওমর বিশ্বাস। কাশিয়ানী থানার এসআই দেওয়ান সাদেকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন বাস চালকের মরদেহ তাদের হেফাজতে রয়েছে।
খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল ও যশোরের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর জরুরি বিভাগের ডাক্তার সাইফুল ইসলাম স্কুলের ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাসকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে টুঙ্গিপাড়া থেকে পিকনিক শেষে যশোরের বাঘারপাড়ার বাঁকড়িতে ফিরছিল তিনটি বাস। পথিমধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস রাস্তার পাশে গাছের সাথে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় তিনজন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়।
ফায়ার সার্ভিস, কাশিয়ানী থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ আহতদেরকে উদ্ধার করে কাশিয়ানী ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বিদ্যুৎ বিশ্বাসকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান খানসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। রক্তদানের জন্য ছুটে আসেন যশোরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। রোগীদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে হাসপাতালে ছুটে আসেন ডিউটি এবং ছুটিতে ঢাকা ডাক্তার নার্স ও সেবিকা ছাত্রীরা। হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক আহতদের সেবায় নিয়োজিত আছে। পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আহতদের রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে বেসরকারি ডাক্তাররাও তাদেরকে সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, আহতদের চিকিৎসায় জেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।