সকাল ১১ টার দিকে স্কুল খোলা হয় বেলা ১ টায় ছুটি
এ আর রাকিবুল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।
শিক্ষার আলো সমাজ ও দেশ থেকে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াবে অর্থাৎ মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে, সমাজকে দুর্নীতমুক্ত রেখে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে কিন্তু নানা অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে চলছে কুড়িগ্রাম সদর ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের খামার বড়াই বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম এমনটাই অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
শিক্ষার মূলভিত্তি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় যদিও পরিবারেই শিখতে হয় লেখা পড়া, সেটার মূল ভিত্তি মজবুত করা হয় বিদ্যালয়ে । কিন্তু সরকারিভাবে ঘোষিত দেওয়া সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে খমার বড়াই বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ১০ টায় বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর নিয়ম থাকলেও এখানে শিক্ষকরা আসেন টা ১১ টায়। বিদ্যালয়ে এসে কোনো রকমে দু-একটি ক্লাস নেন। দুপুর ১টা বাজতেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যান শিক্ষকরা ।
স্থানীয়রা জানান ১১ টার দিকে স্কুল খোলা হয় বেলা ১ টার পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ থাকেনা । এটা নতুন কিছু নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এমনটা করে আসছে। এলাকার সবাই জানে এই স্কুল এগারোটার আগে কেউ খুলে না, আর ১ টার পরে কেউ থাকে না। এটা এখন এই স্কুলের সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১:২৭ মিনিটে খামার বড়াই বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থী নেই । এলাকাবাসী নানা জায়গায় এই অবস্থার প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পড়াশোনা নিয়মিত না হওয়ায় এই বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে অন্য স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হয় নিম্ন ক্লাসে। নাম না প্রকাশ করে অনেক অবিভাবক জানিয়েছেন, এই স্কুলটি বেলা ১১ টার আগে কখনো খোলা হয় না। আর দুপুর একটার পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেই পাওয়া না শিক্ষকদের গাফিলতিতে পড়াশোনা না হওয়ায় দিন দিন শিক্ষার্থী কমছে। বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। চার ঘণ্টায় নয় জন শিক্ষক একটি বা দুটি বিষয়ের ক্লাস নিয়ে বাড়ি চলে যান। এতে খামার বড়াই বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা আলোচনা সমালোচনা দেখা গিয়েছে এই বিদ্যালয়ের।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খামার বড়াই বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেনি কোনো শিক্ষার্থী এই হেড লাইন ছিলো শীর্ষে । গত সোমবার (২৮ নভেম্বর ২০২২) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে জানা যায়, এই বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া কোনো শিক্ষার্থী পাস না করায় অবিভাবকরা পড়েন বিপাকে । পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে রেজিস্ট্রেশন করে চারজন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ৪ জন এর মধ্যে পাস করেনি কেউ।
তবে স্থানীয়দের দাবি প্রতিষ্ঠানটির প্রতি শিক্ষা কর্মকর্তাদের কোনো তদারকি না হওয়ায় এ রকম হতাশামূলক ফলাফল হয়েছিলো। অভিযোগের শেষ এখানেই নয় ,প্রথান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম নিজের আত্নীয় স্বজন এমন কি নিজ স্ত্রী কে নিয়োগ করেছেন এই বিদ্যালয়ে । এমন অনিয়ম আর দুর্নীতি প্রতিকার হবে কিনা এ প্রশ্ন একালাবাসির।
গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্টার খাতায় মোট শিক্ষার্থী ৩৬০ থেকে ৩৬৫ জন কিন্তু ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আছেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন। বাকি ৩৬০ শিক্ষার্থীর বই কোথায় যায় বা কি হয় এটা নিয়েও নানা মন্তব্য করেন অনেকে।
এমন বাস্তব অনিয়ম- দুর্নীতি থাকলেও প্রতিষ্ঠানের প্রথান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমি নিয়ম নীতি মেনেই পরিচালনা করছি। এই প্রতিষ্ঠানে আমার স্ত্রী ও আত্নীয় স্বজনরা তাদের যোগ্যতায় শিক্ষকতা করছেন।
এনিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জহুরুল হক বলেন আমরা ইতিমধ্যে এসব স্কুলের তালিকা করেছি যে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম তার মধ্যে প্রথমে তালিকায় খামার বড়াই বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে । আমরা শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন করেছি অধিদপ্তরের সিদ্বান্ত আসলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে ।