স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ এবং ভালো ফলাফল না পাওয়ায় সারা দেশের ছয়টি মাদ্রাসার এমপিও স্থগিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে যশোরের একটিসহ ছয়টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাদ্রাসা অধিদপ্তর। আগামী ১৫ মের মধ্যে ওই নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ১০ শতাংশের কম হওয়ায় কেন এমপিও বাতিল করা হবে না তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তালিকাভুক্ত যশোরের কেশবপুর মূলগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ১০ শতাংশের কম থাকায় মাদ্রাসাটির শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অধ্যক্ষ মাওলানা আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, ২০২২ সালের আলিম পরীক্ষায় কেশবপুরের মূলগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ১৩ জন পরীক্ষার্থী আলিম পরীক্ষা দেয়। এদের মধ্যে মাত্র একজন পাস করে। বাকি ১২ জন ফেল করে। পাসের হার ৭.৬৯%। অথচ মূলগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসায় ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। এমপিও অনুযায়ী, তাদের বেতন বাবদ প্রতিমাসে খরচ হয় ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
প্রশ্ন উঠেছে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী থাকার পরও কেন একজন পরীক্ষার্থী পাস করবে। তাহলে এত সংখ্যক শিক্ষকদের কাজ কী। তারা কী করেছেন? প্রত্যেক শিক্ষক যদি একজন পরীক্ষার্থীর দায়িত্ব নিতেন তাহলে পাসের হার অনেক বেড়ে যেতো বলে মনে করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
পাসের হার কম হওয়ায় কেনো ছয়টি মাদ্রাসার এমপিও স্থগিত করা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে অধ্যক্ষদের কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বুধবার এ নোটিশ পাঠানো হয়।
যে ছয়টি মাদ্রাসাকে কারণ দর্শানো হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, যশোরের কেশবপুরের মূলগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তাফালবাড়িয়া হোসেনিয়া আলিম মাদ্রাসা, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ব্রাহ্মণচর নওগাঁ আলিম মাদ্রাসা, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসা, পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা ও বরিশালের হিজলা উপজেলার আলিগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা।
এসব মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানো যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাতে অধিদপ্তরের এমপিও বাছাই ও অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব সহকারী পরিচালক লুৎফর রহমান স্বাক্ষর করেছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তাফালবাড়িয়া হোসেনিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালের আলিম পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করতে পারেনি। এই মাদ্রাসায় ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। তাদের পেছনে সরকারের প্রতিমাসে খরচ হয় ৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ব্রাহ্মণচর নওগাঁ আলিম মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় ১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়। এ মাদ্রাসায় কর্মরত ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পেছনে প্রতিমাসে খরচ হয় ২ লাখ ৭ হাজার টাকা।
২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয় বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসা থেকে। তাদের কেউই পাস করতে পারেনি। এই মাদ্রাসার ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা বেতন বাবদ উত্তোলন করছেন।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় ১৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে একজনও পাস করতে পারেনি। অথচ ওই মাদ্রাসার ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পেছনে প্রতিমাসে ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে সরকারকে।
বরিশালের হিজলা উপজেলার আলিগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ১০ শতাংশ। ওই মাদ্রাসায় কর্মরত ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পেছনে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
মাদ্রাসা অধিদপ্তরের পর্যালোচনা বলছে, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক কর্মচারীরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। এ কারণে ওইসব মাদ্রাসার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও স্থগিত বা স্থায়ীভাবে কেন বাতিল করা হবে না তার সন্তোষজনক জবাব আগামী ১৫ মের মধ্যে পাঠাত্যে বলা হয়েছে অধ্যক্ষদের।
এ বিষয়ে কেশবপুরের মূলগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলাউদ্দিন বলেন,‘করোনার কারণে এমন হয়েছে। ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে গেছে। এ কারণে তারা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারেনি।’
কারণ দর্শানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুনেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনোকিছু হাতে পাইনি।’