।। লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল।।
বেগম আয়েশা সরদার ১৯৮৮ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ছিল কবির ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ঢাকা, যশোর ও বাঘারপাড়ার বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালিত হয়েছে ।
বেগম আয়েশা সরদার ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের(১৯২৭ সালের জানুয়ারী) ৫ই মাঘ যশোর জেলার বাঘারপাড়ার খানপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বিয়ের পর স্বামীর পদবী “সরদার“ তঁার নামের শেষে যুক্ত হয়। সেই থেকে তিনি আয়েশা সরদার নামে পরিচিতা। তাঁর পিতার নাম মুন্সী দলিল উদ্দিন। মাতার নাম কুমেলা খাতুন। পিতা মাতার ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ২য়। কন্যাদের মধ্যে তিনিই প্রথম। তাঁর পিতা মরহুম দলিল উদ্দিন আহম্মদ দির্ঘদিন বাঘারপাড়ার তৎকালীন নারিকেল বাড়ীয়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বেগম আয়েশা সরদারের শিক্ষা জীবন গ্রাম্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ৬ষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নের পর ১৯৩৯ সালে যশোর শহরের সুবরাত আলী সরদারের সহিত তাঁর বিবাহ হয়। এরপর তিনি কাজের ফাকে ফাকে বিদ্যা চর্চা করতে থাকেন। ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৬৭ সালে আইএ এবং এমনি ভাবে তিনি বিএ পর্যন্ত পড়া শোনা করেন।
নারী জাগরন ও নেতৃত্বে বেগম আয়েশা সরদারের অবদান অনস্বীকার্য্য
তিনি সমাজ ও দেশ সেবায় নারী জাগরনের ক্ষেত্রে অনেক পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি সমাজ সেবিকার ব্রত গ্রহন করেন। ১৯৪২ সালে তিনি নারী শিল্প আশ্রম এবং ্ওই সময় তিনি মাতৃ ও শিশু মঙ্গল কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাত্রী মন্ডলীর সদস্যা নির্বাচিতা হন।ওই সময় থেকে তিনি যশোর সাহিত্য সংঘের সদস্যা পদে কাজ করেন। ১৯৪৮ সালে “আপওয়ার“ সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে সুদির্ঘ ৮ বছর কাল উক্ত পদে থেকে সমাজ সেবা করেন। ১৯৫০ সালে যশোর শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র পুন:স্থাপনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। সুদির্ঘ ১০ বছর যাবৎ উক্ত প্রতিষ্ঠানে সম্পাদিকা পদে থেকে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সাধন করেন। ১৯৪২ সালে তিনি যশোর সাহিত্য সংঘের সদস্যা হয়ে সাহিত্য সাধনায় রত হন। সাহিত্য সাধনায় তাঁর নিষ্ঠার স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৫৩ সালে “সাহিত্য ভ্থষন‘‘ উপাধিতে ভ্থষিত হন। সাহিত্য সাধনার সাথে সাথে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সালে তাঁর সম্পাদনায় মাসিক শতদল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সাল অবধি এর প্রকাশনা অব্যাহত থাকে। ১৯৫৮ সালে তিনি যশোর জেলা সাংবাদিক সমিতির সভানেত্রী নির্বাচিতা হন। ১২ বছর যাবৎ তিনি বাংলা একাডেমীর স্বক্রিয় সদস্যা ছিলেন।
১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক সদস্যা পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি প্রাদেশিক সদস্যা পদে নির্বাচিতা হন। ্ওই সময় তিনি ঢাকা,নারায়নগঞ্জ,খুলনা, মাগুরা,ভুয়াখালী,নারিকেল বাড়ীয়া,খানপুর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে নারী সমাজ কল্যান সংঘের ২১টি শাখা স্থাপন করেন। তিনি যশোর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য গার্লস হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
বেগম আয়েশা সরদারের অনেকগুলো কবিতার বই রয়েছে। যার পরতে পরতে নারী জাগরনের মুক্তির ঈঙ্গিত বহন করে। কবিতা গ্রন্থের মধ্যে “আগুন রঙের বউটা‘‘,“মায়ামুকুল“ ব্যাপক সমাদৃত হয়।
এই মহিয়সী নারী ১৯৮৮ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সারা দেশে তাঁর নারী জাগরন ও নেতৃত্বের অবদানের কথা অনস্বীকার্য্য।
২০১২ সালের ৯,১০ও ১১ই মার্চ বাঘারপাড়ার খাজুরা এম এন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে “গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র“ আয়োজন করে গ্রামীন জীবনযাত্রা ও কৃষি প্রযুক্তি তথ্য,বীজ মেলার। এই অনুষ্ঠানে দেশের ৩০ জন গুনীজনের সম্মাননা প্রদান করা হয়। মরনোত্তর গুনীজন সম্মাননার মধ্যে বেগম আয়েশা সরদার ছিলেন অন্যতম একজন।