কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি। দুই পায়ে শিকল বেঁধে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী। তার পরীক্ষা কেন্দ্র কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ওই পরীক্ষার্থীকে একনজর দেখতে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
আলম মিয়া ভুরাঙ্গামারী উপজেলার তিলাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থী। সে তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের আব্দুল আলীমের ছেলে।
জানা যায়, পরীক্ষার প্রতিদিন তার দুই পায়ে শিকল বেঁধে তালা লাগিয়ে পরীক্ষা হলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে আবার দুই পা বেঁধে তালা লাগিয়ে বাড়িতে নেওয়া হয়। এভাবেই বন্দিজীবন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া। অথচ কিছুদিনই আগেও আলম খুবই স্বাভাবিক কিশোর ছিল। নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি অবসরে বাবার আটোরিকশা চালাত এবং নিজের পকেট খরচের টাকাও জোগাত। এভাবেই চলত তাদের সংসারজীবন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী আলমের দাদা জসীম উদ্দিন জানান, এসএসসি পরীক্ষার সপ্তাহখানেক আগে তার পিতা অটোচালক আব্দুল আলিম আটো চালিয়ে দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে এলে আলম মিয়া ধামেরহাট বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে ভুরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে যাত্রী নামিয়ে অন্য যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করার সময় অপরিচিত চার ব্যক্তি এসে সোনাহাট স্থলবন্দর যাওয়ার জন্য চার শ টাকায় ভাড়া চুক্তি করে। এ সময় ওই চার ব্যক্তি কৌশলে অটোচালক আলম মিয়াকে একটি ছামুচা খেতে দেয়। তা খাওয়ার পরই আলম মিয়া অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থা দেখে অন্য অটোচালকরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে চক্রটি কৌশলে কেটে পড়ে।
পরে আরেক অটোচালক অটোসহ আলমকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। ওই অটোচালকের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
পরিবার ও স্বজনরা ধারণা করছেন, অটো চোরচক্রের সদস্যরা অটো চুরি করতে ছমুচার মধ্যে অজ্ঞান করার কোনো কেমিক্যাল মিশিয়ে খাইয়েছিল। কিন্তু কেমিক্যালের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব হারুন উর রশীদ বলেন, ছেলেটি অসুস্থ হওয়ার কারণে আলাদা কক্ষে তার পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। খাতায় লিখলেও সে মাঝেমধ্যে চিল্লাচিল্লি করে। কিছুক্ষণ পর সে অশান্ত হয়ে যায় এবং লিখতে চায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম সায়েম বলেন, ‘ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয়, সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে।’ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় সে ভালো হতে পারে বলে জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।