যশোর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
রণজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নামে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ছিল ৭০ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা সোনা।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় সাংসদ রণজিত কুমার রায় বলেছিলেন, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর স্ত্রীর মোটে সম্পদ ছিল নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা সোনা। ১০ বছর পরে এবারের হলফনামায় সেই একই সাংসদ বলেছেন, স্ত্রী নিয়তি রায়ের নামে ঢাকার মিরপুরে ২ হাজার ৭১২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যশোর শহরে তিনটি বহুতল বাড়ি, ৫০ লাখ টাকা দামের আরও দুটি ফ্ল্যাট, ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা দামের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি, ব্যাংকে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ডিপিএস, নগদ ৩৪ লাখ ও ৪৫ হাজার টাকার সোনা রয়েছে।
এইচএসসি পাস সাংসদ রণজিতের আয়ের উৎস পারিতোষিক, ব্যবসা, কৃষি ও ভাড়া আদায়। তিনি যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে আওয়ামী লীগের বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রণজিতের নিজের নামে ছিল এক লাখ টাকার বাঘারপাড়ায় চার বিঘা পৈতৃক জমি এবং ৫০ হাজার টাকা দামের খাজুরা বাজারে আধা পাকা টিনের একটি ঘর। আর এখন সাংসদের সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট, কোটি টাকা দামের দুটি জিপ গাড়ি, বাঘারপাড়ার খাজুরা বাজারে ৯০ লাখ টাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, নগদ ২ কোটি ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, এক লাখ টাকার সোনা, তিন লাখ টাকার আসবাব এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রী।
সাংসদ হওয়ার আগে আড়তদারি ব্যবসা এবং কৃষিজমি থেকে রণজিতের বছরে আয় ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর এখন তাঁর আয় হচ্ছে কৃষি খাতে ৭২ হাজার, বাড়ি ও দোকান ভাড়া ২ লাখ ১০ হাজার, ব্যবসা থেকে ১২ লাখ ৮ হাজার, চাকরির (পারিতোষিক) বেতন ৬ লাখ ৬০ হাজার এবং সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য সম্মানী থেকে ১৬ লাখ ৬৬ হাজার। সব মিলিয়ে যা দাঁড়ায় প্রায় ৩৮ লাখ টাকা।
পরে ২০২৩ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, তার ছেলে রাজিব কুমার রায় প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি কাজের জন্য ৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণ করতেন। তার নিজ ও ছেলের নামে ভারতের সল্টলেক এলাকায় বাড়িও রয়েছে। এই এমপির পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি দখল, মানিলন্ডারিং, নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন।