1. bdtelegraph24@gmail.com : Bdtelegraph Bangla :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. islam.azizul93@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
শিক্ষকের কচকচানি - Bdtelegraph24 | বাংলা
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আলমডাঙ্গায় এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা বৈষম্যমুক্ত দেশ ও জাতি গড়তে মুক্তিযোদ্ধাদের এগিয়ে আসার আহ্বান ড. মনিরুজ্জামান মণির সাদপন্থী খুনি সন্ত্রাসী কর্তৃক তাবলীগের সাথীদের হত্যার প্রতিবাদে শ্যামনগরে মানববন্ধন সামাজিক ও মানবিক কাজে বিশেষ অবদান রাখায় সেচ্ছাসেবীদের সংবর্ধনা  নওয়াপাড়া-পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকা রুটে ৪টি ট্রেন চালুর দাবি অভয়নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি কৃষকরাই দেশের মূল চালিকা শক্তি- টিএস আইয়ুব রাজনৈতিক দলগুলোর বোধদয় কবে হবে ? ফরিদপুরে নির্যাতিত কিশোরকে জ্যান্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা,আটক ২ বাঘারপাড়ায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিপুল সহ ৩০৮ আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীর নামে মামলা,আটক ৫

শিক্ষকের কচকচানি

  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৫৫ শেয়ার হয়েছে

মোঃ মাসুম বিল্লাহ

আজ কাল দিবসের অভাব নেই। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, মানবাধিকার দিবস, নারী দিবস, যুব দিবস মৎস্য দিবস, ভাষণ দিবস, প্রত্যাবর্তন দিবস, শিশু দিবস ইত্যাদি। কিন্তু এর সাথে এমন কিছু দিবসের কথা শুনতে পাওয়া যায় তার অস্তিত্ব মেলা ভার। এই যে ধরুন শিক্ষার্থীদের কথা। এক একদিন এসে কী সব উদ্ভট দিবসের কথা বলে তা আগে কোন দিন শুনিনি। তাদের দিবসগুলো কিন্তু আরো মজার যেমন চকলেট দিবস, প্রপোজ দিবস, হ্যাগ দিবস, ফ্রেন্ডশিপ দিবস, কথা রাখা দিবস। কি অদ্ভুত না শুনতে? এত দিবসের ভিড়ে কত দিবস সম্পর্কে অজানা অভিপ্রায় আদৌ কি এসব দিবস লোক দেখানোর অন্তরাল থেকে বের হয়ে বাস্তবিক প্রয়োজনে কোনো পথ দেখাতে পেরেছে ? হ্যাঁ, উল্লিখিত ২য় পর্বের দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীসহ  তরুণ প্রজন্ম যেমন সরব তেমনি কথা রেখে চলতে দেখেছি। কিন্তু বেশি অবাক হয়েছি: ১ম পর্বের দিবসগুলো দেখে। লোক দেখানো আয়োজন আর ছেলে ভুলানো আলাপ ছাড়া ভূরি ভোজের জমকালো আয়োজনে অর্থ তছরুপের চোখ ধাঁধানো সজ্জা বড় ব্যথিত শুধু করেনা হতাশও করে। বিষয়টা কেমন যেন চাক্ষুষ এই ঘটনার মতো; এক মেয়ে খুলনা সিটি ইন হোটেল উঠল। বিশেষ কোনো প্রয়োজনে এরকম  রাত্রিযাপনে হোটেল একমাত্র ভরসা। প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের নিমিত্তে মেয়েটি হোটেলে অবস্থান করে। হোটেলে বিছানা রুম তার খুব পছন্দ কিন্তু ঝামেলা বাধালো ড্রেসিং টেবিল আর হোটেলের বাইরের সাজসজ্জা একেবারে নিম্নমানের। তাছাড়া বাথরুমের মধ্যে মিনি প্যাক শ্যাম্পু তাকে অবাক করে। আমিও কম অবাক হয়নি। রাত্রি যাপনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার সুব্যবস্থা থাকলে বেসিক প্রয়োজন পূরণ হয়। কিন্তু আজকাল মানুষের বেসিক প্রয়োজনকে গৌণ করে দেখে আর গৌণ জিনিসকে মুখ্য করে দেখার চোখ জন্ম নিয়েছে।

যাইহোক, এবার আসি কাজের কথায়। আজ (৫ অক্টোবর) নাকি শিক্ষক দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকো দিবসটি অত্যন্ত ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। এ দিবসের মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের কথা জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার স্বীকৃতির অন্যান্য নিদর্শন। ইউনেস্কো ও ইআই এর (এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল) প্রতি বছর প্রচাারণা চালায় যাতে বিশ্বের সকল শিক্ষকদের অবদান তুলে ধরা হয়। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থী ও সমাজকে বিকশিত করতে শিক্ষকের গুরুত্ব বিশ্বের সম্মুখে উত্থাপন করা।” আন্তর্জাতিক এমন স্বীকৃতি গর্বের বিষয়।  বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর মনে করা হয়। এমন কোনো দেশ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে শিক্ষককে সম্মান করা হয় না। এই সম্মানের জন্য শিক্ষক সম্প্রদায় জাতির পথ প্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ছোট বেলা থেকে শিশুকে শেখানো হয় “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।” আর সে মেরুদন্ড সোজা রাখার গুরু দায়িত্ব পালন করে শিক্ষক।

বিশ্বের কতিপয় দেশে শিক্ষকের মর্যাদা দেখে অভিভূত হতে হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষক ভিআইপি মর্যাদা পান, ফ্রান্সে আদালতে কেবল শিক্ষকদের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়, জাপানে সরকারের অনুমতি ছাড়া পুলিশ কোন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারে না, চীনের সব থেকে  মর্যাদাপূর্ণ পদ শিক্ষকতা , কোরিয়ায়  শিক্ষকরা মন্ত্রীর সমান সুযোগ পান। সংগত কারণে মানুষের মধ্যে এ মহান পেশার প্রতি ঝোঁক থাকে। এই জন্য ছেলে বেলায় অসংখ্য শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষক হওয়ার বাসনা বিরাজ করে। কেননা এ পেশায় মান মর্যাদার সাথে আর্থিক স্বচ্ছলতার ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থাকে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের মর্যাদার কথা শুনে মন ভরে কিন্তু আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের শিক্ষকদের পেট ভরে না। যৌবনে অদম্য উচ্ছ্বাস আর সীমাহীন স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ হতাশার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত। শিক্ষকের সম্মানে তাই পেট ভরেনি রজব আলির ।

রজব আলী একজন মাধ্যমিকের শিক্ষক। স্ত্রী দুই সন্তান আর রুগ্ন বাবা মাসহ ছয় জনের পরিবার। ২জন বোন ছিল তাদের বিয়ে দিয়েছে অনেক কষ্টে। ১২ হাজার ৫শত টাকা স্কেলে মাধ্যমিকের শিক্ষক হওয়ার  আনন্দে বিভোর। এনটিআরসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে যেন সোনার হরিণ হাতে পেল। জীবনের সকল দুঃখ দুর্দশা এবার কেটে যাবে ভেবে নতুন স্বপ্নে দিন শুরু করলো। সন্তানের মুখে অন্ন আর রুগ্ণ পিতামাতার চিকিৎসা করানোর উচ্ছ্বাস চোখে মুখে। হঠাৎ  বউয়ের পরামর্শে আর একটু স্বচ্ছলতার জন্য একটি গরু কিনলো। স্কুল থেকে ফিরে গরুর জন্য ঘাস কেটে এনে সন্ধ্যায় সন্তানদের নিয়ে পড়ালেখার চর্চা হত। কিন্তু হঠাৎ বন্যায় ডুবে গেল ফসল ও খেতখামার। গরুর জন্য ঘাস কাটার কোন স্থান আর ছিল না। অবলা জীব তাই সমিতি থেকে টাকা তুলে এক কাহন বিছালি  কিনল। সাথে ছোট মেয়ের আবদার রাখতে একটি ইলিশ মাছ কিনল। কথায় বলে শখের তুলা লাখ টাকা । আট মাস আগে কুরবানিতে গোস্ত খেয়েছে। তাই  শখ করে এক কেজি গরুর গোস্ত কিনলো । অনেক দিন পরে ভূরিভোজ হল। বেশ আনন্দে কাটলো পনেরটা দিন। কিন্তু বিপাক ঘটল তারপরে। সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তির টাকা দিতে দিতে সংসার তার চলে না। মাসের অর্ধেক না যেতে বেতনের সব টাকা শেষ, তারপর কিস্তির যন্ত্রণায় দিশেহারা। এ রকম অসংখ্য রজব আলীর  গল্প রয়েছে আমাদের দেশের শিক্ষকদের। শিক্ষক হওয়ার বড় সুফল এতো বেশি সম্মান আপনাকে দেওয়া হবে যে আত্মমর্যাদার দাপটে মুখ ফুটে নিজের কষ্টের  কথা প্রকাশ করতে পারবেন না। অনেক সময়  শিক্ষার্থীর কাছে হাত পাততেও দেখা যায়।

মালেশিয়া, চীন, তাইওয়ান ও জাপানে শিক্ষকদের সবচেয়ে মর্যাদার চোখে দেখা হয়। মর্যাদার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের  রয়েছে উন্নত বেতন কাঠামো। বর্তমান বিশ্বে ফিনল্যান্ডকে  শিক্ষার রোল মডেল হিসেবে ধরা হয়। সে দেশে একজন শিক্ষকের গড় মাসিক বেতন ক্ষেত্রভেদে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা। যা আমাদের দেশে একজন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকের কয়েক বছরের বেতনের সমান। আমেরিকার শিক্ষকদের গড় মাসিক বেতন  ৬ থেকে ৯ লাখ টাকা, কানাডাতে গড় মাসিক বেতন ৯ লাখ টাকা, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৮ লাখ টাকা, নরওয়েতে প্রায় ৬ লাখ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও আমাদের থেকে ঢের বেশি। যেমন ভারতে প্রায় ৪০ হাজার, নেপালে ৩৫ হাজার, ভুটানে ৩৯ হাজার, মালদ্বীপে ৯০ হাজার, পাকিস্তানে ৩০ হাজার আর আমাদের দেশে ১২৫০০ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম তারিক হাসানের ভাষ্যমতে, “অন্যান্য দেশের তুলনায়  বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো দুর্বল।” আর মর্যাদার দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় প্রাথমিক পর্যায়ের সহকারী শিক্ষক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদা পান। শুধু প্রধান শিক্ষক পান দ্বিতীয় শ্রেণির।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যেমন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত । এই তিন ক্ষেত্রে দেখা যায় চরম আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য। বলাবাহুল্য দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভুক্ত ) প্রায় ৯৭ শতাংশ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত। বর্তমানে দেশে ২৯ হাজার ১৬৪ টি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে ৫ লাখ শিক্ষক কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে আরো বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নন-এমপিও এবং সেখানে অসংখ্য শিক্ষক শুধু গাঁয়ে খেটে কর্মরত। নন এমপিও এ সকল প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪ শতাংশ শিক্ষক সরকারি এবং ৯০ শতাংশ শিক্ষক এমপিওভুক্ত। অর্থাৎ বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে এই এমপিও শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পেটের দায়ে এ সকল শিক্ষক নিজের মেধা ও মনন ভুলে টিউশনি , খণ্ডকালীন চাকরি ও ছোটখাটো ব্যবসার সাথে জড়িত। এমপিও শিক্ষকদের মুর্মূষু বেতন শিক্ষকতার মত মাহান পেশায় নিয়োজিত করতে অনাগ্রহী করছে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের প্রস্তাব করা হলেও ২০২৪ সালে এসেও তা আলোর মুখ দেখেনি। বাসা ভাড়া আর উৎসব ভাতার নামে প্রহসনমূলক অনুকম্পা কেবল বেতন বৈষম্য সৃষ্টি করে না বরং অসম্মানের ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, তরুণ প্রজন্মের মেধা মননকে জাতীয় স্বার্থে উৎপাদনশীল করতে শিক্ষকদের প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। আর খালি পেটে প্রতিযোগিতা মূলক বিশ্বে আমাদের শিক্ষকরা সিটকে পড়লে জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। এজন্য শিক্ষার অবকাঠামোতে বরাদ্দ বাড়ালেই গুণগত মানের উন্নয়ন হবে না। শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন, মান-মর্যাদা ও বেতন এ ত্রিবিধ ক্ষেত্র একত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোরিয়া, হংকং, জাপানে শিক্ষকদের রয়েছে আলাদা বেতন কাঠামো। ভুটানের মতো দেশে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হয়। আর আমাদের দেশের শিক্ষকদের পাছায় জোটেনা তেনা। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমাদের সকলের প্রত্যাশা শিক্ষক সমাজ ফিরে পাক বাদশা আলমগীরের কাছ থেকে পাওয়া সম্মান। সম্মানের বুলি আউড়িয়ে ছেলে-ভুলানো গানে ঘুমিয়ে না রেখে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করলে ন্যুব্জ শিক্ষক মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে।

মোঃ মাসুম বিল্লাহ, প্রভাষক (বাংলা),গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদ্রাসা, অভয়নগর, যশোর

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2022
Theme Customized By BreakingNews