প্রতিনিধি, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পাঁচ নং পোল্ডারের উপকূল রক্ষা বাঁধের ভামিয়া এলাকার নির্মিত জলকপাট বার বার ভাঙে। আর প্রতিবার ভাঙনে কপাল খোলে পাউবো কর্তাদের। যে কারণে স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটে না কতৃপক্ষ। বরং ভাঙন দেখা দিলেই ‘জরুরী মেরামত’ এর নামে সেখানে নামকাওয়াস্তে কিছু মাটি ও বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজ করা হয়। গত ১৫ মাস ধরে এমন অবস্থা চলছে উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের প্রবল ভাঙন কবলিত ঐ অংশে।
স্থানীয়দের দাবি ভাঙন দেখা দেয়া মাত্রই পাউবো’র পক্ষ থেকে ভাঙন রোধে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা না থাকায় উক্ত ভাঙন মেরামতে ঠিকাদার নিযুক্ত করার সুযোগ থাকে না। সেই সুবিধা নিয়ে পাউবো কতৃপক্ষ অফিসের নিম্ম পদস্থ কর্মচারীদের ‘জরুরী ভিত্তিতে’ মেরামত সংক্রান্ত সম্পাদনের দায়িত্ব দেন। এভাবে খোদ পাউবো’র লোকজন ভামিয়ার জলকপাট মেরামতের দায়িত্বে থাকায় প্রায়শই উক্ত অংশ ভাঙনমুখে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা যায় থার্ড ফিশারি প্রকল্পের আওতায় ১৯৮৫ সালে ভামিয়া গ্রামের নাপিতবাড়ি এলাকায় পাঁচ ব্যান্ডের উক্ত জলকপাট নির্মিত হয়। স্থানীয় জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে কারিতাস নামীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে পাউবো কতৃপক্ষের তত্বাবধানে উক্ত জলকপাট তৈরী হয়।
ভামিয়া গ্রামের হরিদাস বিশ্বাস ও স্বপন মন্ডলসহ স্থানীয়রা জানায় ভামিয়া খাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা। যার ফলে আবদ্ধ হয়ে পড়া পানি নিস্কাশনের সুযোগ না থাকায় জলকপাটের নিচে ঘোগা(ছিদ্র/সুড়ঙ্গ) তৈরী হয়ে সেখানে প্রায়ই ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ ২০২৩ সালে জুলাই মাসে ভামিয়ার জলকপাট প্রথম দেবে যায়। সেসময় প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙন কবলিত অংশে মাটি ও জিও বস্তার ডাম্পিংয়ের কাজ করা হয়। মেরামতের দুই মাস পরে একই স্থান আবারও ভাঙনমুখে পতিত হলে অভিন্নভাবে মাটি ও বস্তার কাজ করা হয় সেখানে। এভাবে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ দফা ভাঙনের শিকার উক্ত জলকপাট সংলগ্ন অংশে এখন পঞ্চম বারের মত মেরামত কাজ চলছে।
হরিদাস বিশ্বাস জানান বার বার সংস্কার করলেও স্থায়ী সমাধানের পথে হাটছে না পাউবো কতৃপক্ষ। বরং ইজারা গ্রহীতাদের সাথে যোগসাযশ করে পাটাতন তোলার ব্যবস্থা না করে জলকপাট অংশে ভাঙন সৃষ্টির সুযোগ তৈরী করছে। যার প্রেক্ষিতে বারংবার কাজ করার সুযোগ নিয়ে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ উক্ত জলকপাট অংশে পাঁচবার ভাঙলেও কখনই কোন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়নি। প্রতিবারই ‘জরুরী মেরামত’ কাজের অংশ হিসেবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদুজ্জামান তার দপ্তরের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী খোরশেদ আলমকে দিয়ে উক্ত মেরামত কাজ সম্পন্ন করিয়েছেন। স্থায়ী সমাধান হলে পরবর্তীতে কাজ করার প্রয়োজন পড়বে না- চিন্তা থেকেই সেখানে বার বার নামকাওয়াস্তে কাজ করা হচ্ছে বলেও এসব গ্রামবাসীর অভিযোগ।
এসব বিষয়ে পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদুজ্জামান বলেন, সেখানে আমার ঘের বা জমি জায়গা নেই, তাই কপাল খোলা নিয়ে স্থানীয়দের বক্তব্য উদ্দেশ্যমুলক। তিনি আরও বলেন, আপাতত মেরামত কাজ চলছে। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে একটি জলকপাট নির্মানের চিন্তা চলছে।