1. bdtelegraph24@gmail.com : Bdtelegraph Bangla :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. islam.azizul93@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
অবচেতনাই কি সচেতনতা - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

অবচেতনাই কি সচেতনতা

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১১২ জন খবরটি পড়েছেন

।। মোঃ মাসুম বিল্লাহ।। সুমন ছেলেটি কথায় কথায় বলে “আমরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি সকল কথা মোকাবেলা করার টেনডেনসি আছে।” কথাটি শুনতে মনের মধ্যের মানুষটি প্রশ্ন করে উঠল, অন্যের মত গ্রহণ করার টেনডেনসি আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কতটুকু সভ্য হতে পেরেছো। সভ্য। তবে কি সবাই অসভ্য? প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। সংস্কৃতির উন্নয়নকল্পে আমরা সভ্য সমাজে বাস করছি। কিন্তু মনের মধ্যে আদিম যুগের ধ্যান ধারণা পোষণ করে আছি। সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে সভ্যতার খোলস। গায়ে জড়িয়ে মনে মনে শুধু ধিক্কার দিচ্ছি।

দিন বদলের পথে উঠে বিপরীত স্রোতে ভাসছি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক (রাবি)-তে এসেছিলেন ।কোন একটি কারণে তিনি চমৎকার হলেন বটে, কিন্তু আশ্চর্য হলেন বেশি। কোন একজন শিক্ষককে কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে প্রশ্ন করে বসলেন: তোমাদের ক্লাস আওয়ার কতটুকু। স্যার উত্তর দিলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা। তখনি বলে ফেললেন, এ সময় এত লোক বাইরে থাকে কেন? একথা শুনে লজ্জিত হবার কিছু নেই। কারণ ছাত্রদের ধারণা আমি অপমানিত না হলে কে আমাকে অপমান করবে। এ সামান্য ব্যাপারে তিনি উদ্বিগ্ন হলেন।

কিন্তু যদি দেখতেন ক্লাসগুলোর সামনে দিয়ে লম্বা মিছিলে শ্লোগান, মাইকে গলাফাটানো চিৎকার। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে। হয়তো এ ভালোর জন্য তিনি এ দেখা থেকে বঞ্চিত হন। মনে হল আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এতো গেল বাইরের কথা এবার ভিতরের দিকে নজর দেওয়া যাক। প্রতিদিনের মত সেদিনও ক্লাস করছিলাম। অন্যকোন ডিপার্টমেন্টের ছেলেমেয়েরা ক্লাস শেষে বাড়ি অভিমুখে ফিরছিল। এ ফেরা তাদের সুখের স্বর্গে ফেরা অন্যকে পিষ্ট করে। মোবাইলে উচ্চস্বরে গান, কেউ কথা, কেউ চিৎকার, কেউ নৃত্য, কেউ আবার হাসি। শুধু আজ নয় প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এ ঘটনা ঘটছে। আমরা নির্বিকার দর্শকরূপে সব দেখছি আর নিজের ভিতর গুণগুলো আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করছি। তবে কেউ যে এর অনুরাগে ভাবছে না তা নয়। দিন বদলের সারথী আমরা। কিন্তু কি বদলাতে পেরেছি? নিজের খামখেয়ালিপনা স্বভাবটা আজও নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। আর আমরা গর্ব করি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।

আমার এক শিক্ষক একদিন বলেছিলেন, আমার বিশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০% ছাত্রের মনন নেই সুতরাং বুঝা যায় নৈতিক অবক্ষয় কতটা ভয়াবহ। তাছাড়া ক্লাস রুমটাকে মনে হয় কনসার্টের স্টেজ। না হয় তো নাট্যশালা। আর এখানকার দর্শক গরু আর ছাগল। প্রতিনিয়ত ঘটছে এ ঘটনা, শুধু ঘটনা ঘন ঘটা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকরা কতটা ভূমিকা রাখছে। শিক্ষক জাতির পথ প্রদর্শক। যুগে যুগে তার আবির্ভাব সত্য সঠিক পথ দেখানোর জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা আরো বেশি অবাক করে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি এত ভদ্রতা কিভাবে শিখলেন? তিনি বলেছিলেন আমি বেয়াদবের কাছ থেকে আদব শিখেছি। একথা থেকে মনে হয় না কি আমাদের আচরণ, সহনশীলতা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দরকার। যাতে আমরা মানুষকে মানুষ বলে জানতে পারি, অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করতে শিখি, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে শিখি, ন্যায় অন্যায় বিচার করতে পারি, মন্দ পথ বর্জন করে ভালো পথ গ্রহণ করতে পারি। যাতে করে শিক্ষা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। শিক্ষার খোলস ছেড়ে যেন পশুত্বের বিকাশ না ঘটে।

হার্বাট স্পেনসার মতো যেন সবাই এই আদর্শে বিশ্বাসী হই। “স্বাধীনতা মানে নিজের খুশি মতো কাজ করা, অন্যের কাজের বাঁধা সৃষ্টি না করে।” যেন স্বাধীনতা আমাদের যথেচ্চারে পরিণত না হয়। জীবনের প্রতিটি পর্যায় যেন জাতিকে কিছু দিতে পারি। এসব কিছুর জন্য প্রয়োজন নিজেকে বদলানো। যতোই আওয়াজ তুলি হবে না কিছুই যদি না নিজে পাল্টাই। আমাদের নিজেদের অনেক ছোট ছোট অভ্যাস পাল্টালেই বদলে যেতে পারে সমাজটা।
এমনি একটা লেখা ১৪ নভেম্বর ২০০৮ প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বাসে লেখা মহিলা সিট কিন্তু সে সিটে একজন নারীর পাশে বসে আছে দুজন পুরুষ। বয়বৃদ্ধ এক মহিলা পাশে দাঁড়িয়ে। একজন গম্ভীরভাবে তাকিয়ে অন্যজন চোরের মত মুখ ফিরিয়ে, বিবেক যেন তাদের মৃত।

অন্যের সুখের জন্য নিজের বিন্দুমাত্র সুখ পরিহার করতে রাজী না। আর কতদিন ভদ্রলোকের পোশাক পরে এমন অভদ্রতা মনের মধ্যে পুষে রাখবে? জীবনামৃত্বের স্বাদ ভোগ করতে করতে মানুষ জীবনকে ভুলে গেছে মানুষকে ভুলে গেছে। আবার অন্য একটি প্রতিবেদনে দেখে আরো চমকে গেলাম। পরিবর্তনের কথা বলে সবাই কিন্তু পরিবর্তন কোথায়। দেশের অরাজক অবস্থা সামাল দিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে। দীর্ঘ সময়ে জারিকৃত এ জরুরি অবস্থার কারণ হয়তো রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। যেন পুরো রাজনীতি একটা নির্দিষ্ট
প্রক্রিয়ায় নতুন ধারায় প্রবাহিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংস্কার লক্ষ্য করা গেলেও তা মুখ থুবড়ে পড়ে। দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত এমনকি দন্ডপ্রাপ্ত রাজনৈতি নেতাদের সরকার এখন বাধ্য হচ্ছে ছেড়ে দিতে। এ কোন দেশ যেখানে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তকে না ছাড়লে রাজপথে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়, বন্ধ করা হয় জীবনের চাকা।

যে আশার বাণী দেখেছিল সচেতন মানুষ তাদের সে আশা মরিচীকা হয়ে গেল। নির্বাচনে না যাওয়ার বাহানা করে তলে তলে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে জনগণ নতুন কিছুর প্রত্যাশী, নতুন পথে আগ্রাসী, নতুন কিছু চাই কিভাবে তাদের হতাশ করা হচ্ছে। কেউ বলছে আমরা নির্বাচনে যাব না, আবার কেউ বলছে নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা না হলে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। জনগণ কি তাদের কাছে এই হতাশার বানী চেয়েছিল? এতে বোঝা যায় আমাদের দেশে যতই পরিবর্তনের কথা আসুক কোন লাভ নেই, যত দিন না তারা নিজেরা সচেতন হবে। তাইতো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চিরচারিত অভ্যেসের আভাস দিয়ে চলেছে। কিভাবে পরিবর্তন আসবে জাতির কিভাবে পরিবর্তন হবে দেশের।

দীর্ঘগামিতায় ভাসতে ভাসতে মানুষ আজ অস্থির হয়ে উঠেছে। কি তাদের চাওয়া কি তারা পাচ্ছে। চাই এমন প্রেক্ষাপট। যেন কেউ আর প্রশ্ন তুলতে না পারে এই বাংলাকে নিয়ে। সহনশীলতার মনোভাব সবার মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। বুঝতে হবে আমি মানুষ, নই কোন পশু। তাই পশুর মত আচরণ বর্জন করে পাল উড়িয়ে নাবিক হয়ে ভাসাতে হবে তরী জীবনের বন্দরে। আত্মবিলাসী না হয়ে হতে হবে আত্মত্যাগী। তেমনি প্রশাসনিক দৃঢ়তা শক্ত করতে হবে। নীতির প্রশ্নে কোন আপোষ চলবে না। শক্ত হাতে দমন করতে হবে। দুর্নীতি-অন্যায়। সব সময় মায়ের ভালোবাসা নয় বরং গুরুর বেতকে কাজে লাগাতে হবে। সচেতনতাই হতে পারে সব রোগের ঔষধ।
লেখক- প্রভাষক (বাংলা)
গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদ্রাসা,

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews