মোঃ মাসুম বিল্লাহ।। সুদূর অতীত থেকে উন্নত জীবনের সন্ধান দানের লক্ষ্যে পারস্পরিক চুক্তির ভিত্তিতে মানুষ
বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ কল্যাণকারী প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র। মানুষের নিরাপত্তা বিধানে উচ্ছৃঙ্খল জীবনকে নিয়ম নীতি দ্বারা ঝালাই করে শৃঙ্খলতার বেড়ি পরায় রাষ্ট্র। সর্বপরি রাষ্ট্র নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করে।
পক্ষান্তরে ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার্থে কাজ করে। সুপ্রাচীন কালে যখন মানুষের মধ্যে সম্পত্তির ধারণা জন্ম নেয়, তখন থেকে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বর্তমানে নদীর চর এলাকায় এরূপ সম্পত্তি দখলে ক্ষমতার দম্ভ দেখা যায়। এরূপ অরাজকতা পূর্ণ অবস্থার বদলে ব্যক্তি মালিকানা অধীকারের স্বীকৃতি দেয় রাষ্ট্র।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রের কার্যাবলীর পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ার সাথে সাথে সুশীল নাগরিকের অভাবে রাষ্ট্রের, সুফল থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ।
মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ার সময় কোন একজন শিক্ষক বলেছিলেন; সারা রাত বটতলায় ঘুমিয়ে থাকলেও প্রশাসন বা অন্য কার দ্বারা আমাদের মত নিরীহ লোকের সমস্যা হবে না’। দীর্ঘ সময়ে জীবন অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতিতে আজ দেখা যায় স্যারের কথার উপর আমার বিশ্বাসে ঘুন পোঁকা ধরেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানে অক্ষম রাষ্ট্র। একথার পিছনে আমার অকাট্য যুক্তি ক্যাম্পাসের অস্থির রাজনীতি। পক্ষ-বিপক্ষের গ্রুপের
মধ্যে হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ে জীবন দেয় সাধারণ ছাত্র।
ঘুষ প্রবেশ করেছে রাষ্ট্রের প্রতিটি শিরা উপশিরায়। প্রতিরক্ষা বিভাগের লোক নিয়োগে লক্ষ টাকার বিনিময়ে আনফিট হচ্ছে ফিট। আমরা ব্যস্ত জীবন অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি আমার ভাইয়ের সব ধরণের কোয়ালিফিকেশন থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে চাকুরী না হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে সমাজ সংসারের কাছে অবহেলিত হতে হয়। অন্যদিকে এক বন্ধু টাকার বিনিময়ে অনেক লোককে চাকুরী দান করেছে। এখানে চাকুরী জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? কারণ জীবন নামক যাত্রী যেন টাকার অভাবে ধুকে ধুকে নিঃশেষ হচ্ছে। বিনা অপরাধে মিথ্যার অপবাদ মাথায় নিয়ে
পথ চলা এটাই কি অনিরাপত্তা প্রমাণ করে।
অপরদিকে হরতালের মত জঘন্যতম কারণে দেশের কোটি কোটি টাকা লোকসান শুধু নয় ভাংচুরসহ সাধারণ যাত্রীদের মৃত্যু ঘটে। রাজনৈতিক কোন্দলে নিরীহ বাস যাত্রী অকালে প্রাণ হারায়। এসব কি অনিরাপদ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নয়? ফিরে যায় স্যারের কথায়। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে এক ছাত্রের মৃত্যু ঘটে। এর রেশ ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো কয়েক ছাত্রের জীবন গেল। এমতাবস্থায় বন্ধুরাসহ আমি ক্লাস করতে গিয়ে দেখি ইংরেজি বিভাগের দু’জন ছাত্রকে শুধুমাত্র সন্দেহ বশত পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ঠিক তারপর দিন আমার বন্ধুসহ আমাকে এসে মানসিক টর্চার করল। তাদের কাছে অপরাধ ছিল আমার বন্ধুটি তাদের দিকে তাকিয়েছিল কথা কাটাকাটি করলে হয়তো মার খেতে হত। অপর দিকে ঢা.বি.তে ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিরীহ ছাত্র আবু বক্কর প্রাণ হারায়। যে ছেলেটি বাবা মার একমাত্র চোখের মনি, যাকে বুকে আগলে পিতামাতা বাঁচতে চেয়েছিল। সেই ছেলের মৃত্যুতে তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ, হয়ে গেল।
এরূপ সামান্য কারণে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলে। আর যেখানে শিক্ষা নেই সেখানকার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল কী? আর কী অর্জিত হল? জরুরী অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী করার কারণ ছিল যেন সমগ্র রাজনৈতিক প্রক্রিয়া একটা নির্দিষ্টখাতে প্রবাহিত হয়। কিন্তু যে গভীর সৎকারের আশা করেছিল মানুষ যেন আশার গুড়ে বালি। এ নির্বাচনে দূর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত ও দন্ডপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতাদের জামিন দিয়ে নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এতে সরকারের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা থেমে যায়। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো ঠিকই নিজের ইচ্ছামাফিক নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে নিজের ইচ্ছামত চলছে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খুন হলে সে দেশের কর্তা
ব্যক্তিরা যদি বলে এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ সেখানে নিরাপত্তা কী ভূলুণ্ঠিত হয় না। আশাময় জীবনে আলো জ্বালাতে ব্যর্থ আজ রাষ্ট্র।
নিরাপত্তা বিধানের নিমিত্তে কতনা চেষ্টা, সংবিধানে নানান রকম প্রস্তাবনা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর নিচুবৃত্তির জন্য সংসদের মত প্রতিষ্ঠান হয় কলঙ্কিত। রাষ্ট্র জড়বস্তু তাই রাষ্ট্রের দোষ দেওয়া বোকামী। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনাকারী তো মূর্খ নয়। তবে কেন তারা রাষ্ট্রকে অনিরাপদ করে তোলে? অনিরাপদ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানের দায় কার?
রাষ্ট্রকে যদি একটি বাড়ির সাথে তুলনা করা হয় তবে দেখা যাবে, বাড়ি সজ্জিত করণে গৃহিনী থেকে কর্তাবাবুর কতনা চেষ্টা সাথে অন্যান্য পরিজনকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলার দায়ভারও তার। এতে ব্যর্থতার দায়ভার যেমন বাড়ির উপর পড়ে না পড়ে কর্তাবাবুর উপর। তদরূপ রাষ্ট্রের দায়ভার রাষ্ট্রের নয়, বাড়ির কর্তারূপি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের। অনিরাপদ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানের নিমিত্তে প্রশাসনিক সক্ষমতার পাশাপাশি সুনাগরিক
অপরিহার্য। আর তা যখন বদলায় না, তখন ভোগ করতে হবে অনিরাপদ রাষ্ট্রের অন্তঃসার শূন্যতা।
লেখক, প্রভাষক (বাংলা),গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদ্রাসা,