।।মোঃ মাসুম বিল্লাহ।। পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণের জন্য যুগে যুগে বহু নবী-রাসুল এসেছেন। তাদের প্রবর্তিত
ধর্মগ্রন্থ মানুষকে দেখিয়েছে আলোর পথ,সত্যের পথ। আমাদের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপরে কুরআন অবতীর্ণ হয় এবং তার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেন। আমরা মুসলমানরা সেই ইসলামকে মনে প্রাণে ধারণ করি লালন করি পালন করি। ইসলাম সত্যের ধর্ম ন্যায়ের ধর্ম এখানে আছে মানবিকতা ও মানুষের জীবনের এক উৎকৃষ্ট শিক্ষা, যা দিয়ে গিয়েছেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বলা হয়। আল্লাহ তাআলা যদি তাকে সৃষ্টি না করতেন তাহলে এই পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না। সেই মানবজাতির কান্ডারী তিনি আমাদের হেদায়েতের পথ দেখিয়েছেন। সত্যের পথ বলে গিয়েছেন। সুষ্ঠ ধারা নির্মাণ করে তিনি আমাদের কাছে অবিস্মরণীয় অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে আছেন।
আমরা জানি ইসলাম পাঁচটি মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। কালেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ্ব। মুসলিমরা এই যে পাঁচটি স্তম্ভ কে অনেক বেশি গুরুতর সহকারে নিয়ে থাকে। মুসলিম বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে হজ একটি পবিত্র ইবাদাত। পৃথিবীর বুকে সর্ববৃহৎ একসাথে মানুষের জমায়াতের একটি কেন্দ্র স্থল হচ্ছে হজের ময়দান। এরপরে যদি আমরা বলি দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েত, তাহলে মুসলমানদের ক্ষেত্রে হয়তো এসে দাঁড়াবে বিশ্ব ইজতেমা। যেটা বাংলাদেশে প্রত্যেক বছর হয়ে থাকে। ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমা আয়োজিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সেখানে সমবেত হয়। এখানে একত্রে মিলিত হলে আমরা হজ করলে যে সওয়াব পাই সে সওয়াব পাব কিনা এটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকতে পারে। কেননা রাসূল সঃ হজকে ফরজ বলে গিয়েছেন। তিনি নিজে করেছেন অন্যকে করতে বলেছেন। সমর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার হজ্ব ফরজ।
কিন্তু টঙ্গী ময়দানে সকলকে একত্রিত হওয়া এটাকে ফরজ বলেননি। রাসূল সঃ এ দেশে ইজতেমার আয়োজন হবে তা কখনো বলে যাননি। সুতরাং এটা আমাদের জন্য ফরজ না। কিন্তু আমরা যদি দেখি ধর্মপ্রাণ মানুষ একত্রিত হয়ে একটি স্থানে আল্লাহর গুনোগান ও নিদর্শন শুনতে চায় তবে এটা একটা মহৎ স্থান। তারা ধর্মীয়ভাবে নিজের অনুভূতিকে জাগ্রত করতে চায়। তারা আরো বেশি সুশৃংখল হতে চায়। ধর্মের মূল বাণীকে আঁকড়ে ধরতে চায়। তার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন কোণ থেকে মানুষ এখানে এসে একত্রিত হয়।
সুতরাং মুসলিম বিশ্বের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় টঙ্গীর তুরাগের তীরের বিশ্ব ইজতেমা। এখানে উদ্দেশ্য সহিহ। প্রত্যেকটা মানুষ চাই মন প্রাণ উজাড় করে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করবে। কিন্তু আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে যেয়ে মানুষের মধ্যে নানান ধরনের হটকারী কার্যক্রম।যা খুবই দুঃখজনক। ২০২৪ সালে বিশ্ব ইজতেমা এরকম একটা দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামায়াতের (মওলানা সাদ ও মওলানা জুবায়েরুল) দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চারটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। আমি জানিনা এর দায়ভার এই দুই গ্রুপ প্রধান নিবেন কি না। প্রত্যেকে কি তার জায়গা থেকে সঠিক? প্রত্যেকে তার আদর্শের সাথে আপোষ করেনি। কিন্তু এর মাঝে ঝরে গেল যে চারটি প্রাণ এর মূল্য কতটুকু দিতে পারছি আমরা? ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কখনো হিংসার কথা বলে না। হানাহানির কথা বলে না। আপনারা সেই বাণীকে মর্মে ধারণ করতে এসে কেন হানাহানিতে, কেন রক্তারক্তিতে জড়িয়েছেন? ইসলাম কখনো এই শিক্ষা তো দেয় না। রাসূল সঃ এই শিক্ষা দিয়ে যাননি। তবে আপনারা কেন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছেন? আমি জানি এ কাজ করতে পারে না আল্লাহ প্রেমিক কোন মানুষ। আল্লাহর বান্দা ও নবীর উম্মত আর ইসলামকে ধারণকারী কোন মুসলমান এ কাজ করতে পারে না। কোন ধর্মভিরু ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে না। হ্যাঁ এ কাজ করেছে, এ কাজ হয়েছে কিছু মুসলমানদের দ্বারা। আমাদের বুঝতে হবে মুসলমান মাত্র ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করে না।
ইসলাম একটি জীবন বিধান। এ জীবন বিধানের ছায়াতলে অনেক মানুষ এসেছে। যারা মুসলিম নামধারী কিন্তু সবাই মুসলমান হয়ে উঠতে পারেনি। তারা মুসলমান কিন্তু মুসলিম হয়ে রাসুলে আদর্শকে জীবনের চর্চা করতে পারেনি। এজন্য অনেক মুসলিম নামধারী ব্যক্তি এখানে আসে। তারা স্রষ্টার পরিবর্তে তার নেতার আদর্শ দ্বারা তাড়িত হয় এবং সে আদর্শের বাইরে কোন কিছু করতে চায় না। যখন তার নেতার আদর্শটাকে মেনে নেওয়া হয় না তখনই তারা বিক্ষোভ করে বসে এবং একটা পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। আমাদের মত যারা সাধারন মুসলিম, যাদের ধর্মীয় জ্ঞান কম এই মানুষগুলোই হুজুকে হয়ে থাকে। তারা অল্পে অনেক বেশি সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। তারা তাদের অনুকরণকৃত বা তাদের যে নেতা থাকে সে নেতার আদর্শের বাইরে ইসলামে কি আছে, ধর্মে কি আছে সে সব কথা
তারা মানতে চায় না। সমস্যা বেড়ে যায় তখন যখন তারা তাদের নেতা যা বলে সেটা ঠিক মনে করে বাদবাকি সব কিছুই ভুল মনে করে, সমস্যাটার সৃষ্টি হয় তখন। ঠিক তেমনি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে। এটা কখনো আমাদের জন্য কাম্য নয়।
মুসলিম মানুষ একমাত্র আল্লাহকে, আল্লাহর বিধানকে এবং রাসূল সঃ এর নির্দেশিত পথকে অনুসরণ করবে। আর সেই মহৎ পথকে অনুসরণ করতে যেয়ে আমরা যুগে যুগে বিভিন্ন অলি-আউলিয়া এসেছেন, আসবেন। তাদের দেখানো পথকে আমরা অনুসরণ করবো ততক্ষণ যতক্ষণ সেটা রাসুলের সাথে যায়। অলি আউলিয়া পীর দরবেশ তাদেরকে অনুসরণ করব শুধুমাত্র রাসুলের জন্য। তাদের জন্য আমরা হয়তো সহজ করে আমাদের দিনটাকে
পেয়েছি। এজন্য অনুসরণ করব কিন্তু তাদের আদর্শে আদর্শিত হব না। আমাদের আদর্শ হবে একটা তা হলো রাসূলের আদর্শ। আমরা রাসূলকে ভালবাসি, প্রতিটা ধর্মপ্রাণ মানুষকে ভালোবাসি, মুসলিম হিসেবে একজন মুসলিম অন্য মুসলিমকে ভালোবাসি। কিন্তু আমরা আমাদের নেতাকে অনুসরণ করতে গিয়ে তাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবো না। আমি কি করে মুসলিম হতে পারি আমার নেতার নির্দেশে বা নেতার মতকে অনুসরণ করার জন্য আরেক জনকে যদি আঘাত করি? তাহলে বুঝতে হবে আমরা ভালো মুসলিম হতে পারেনি।