গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৮ জুন) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িটিও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত দাওয়াত ভ্রমণে ব্যবহার হতে দেখা গেছে, যা নিয়ে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, দুপুর আড়াইটার দিকে ইউএনও’র বাসভবনের সামনে উপজেলা পরিষদের গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিছু সময় পরই ইউএনও’র স্ত্রী ও তার মা ওই গাড়িতে ওঠেন। এরপর চালক সামিউল ইসলাম গাড়িটি সহকারী কমিশনার (ভূমি) জসিম উদ্দীনের ভাড়া করা বাসভবনের সামনে নিয়ে যান, যেখানে সহকারী কমিশনারের সরকারি গাড়িটিও উপস্থিত ছিল।
উপজেলা পরিষদের গাড়িচালক সামিউল ইসলাম জানান, “গাড়িতে ইউএনও স্যারের স্ত্রী ও মাকে নিয়ে এসিল্যান্ড স্যারের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। ইউএনও স্যার তার গাড়িটি নিয়ে রংপুরে মিটিংয়ে গেছেন। এ কারণে আমাকে বলে গেছেন এই গাড়িটি ব্যবহার করতে।”
এদিকে, ইউএনও নিজেই তার জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি নিয়ে রংপুর গেছেন। তবে তার রংপুর সফর ব্যক্তিগত নাকি দাফতরিক, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইউএনও’র সরকারি নম্বরে বারবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার গাড়িচালক শাহীন মিয়ার নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি নীরব ছিলেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউএনও এর আগেও দাফতরিক সময়ের বাইরে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে রংপুর ও নিজ বাড়িতে যাতায়াত করেছেন। এই ঘটনায় উপজেলার সচেতন নাগরিক, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা ইউএনও’র এমন আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জনসেবার মান উন্নয়ন ও দায়বদ্ধতা প্রত্যাশিত হলেও তার এমন আচরণ চরম অনিয়মের উদাহরণ। তারা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “দাফতরিক কাজ ছাড়া কোনো কর্মকর্তার জন্য সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরিবারের সদস্যদের নিয়েও সরকারি গাড়ি ব্যবহার গুরুতর অনিয়ম। এটি আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের শামিল। এসব বিষয়ে কঠোর তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে।”
উল্লেখ্য, ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম সাদুল্লাপুরে ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলা, সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফোন বা বার্তায় সাড়া না দেওয়া ও দায়িত্ব এড়ানোসহ একাধিক অভিযোগ স্থানীয়ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে সম্প্রতি স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।