কুমিল্লার চান্দিনার কামারখোলা গ্রামে এক বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। গল্পটা মাহবুব আলম রুবেলের, যিনি পেশায় কৃষক, পরিচয়ে স্থানীয় কৃষকদলের ওয়ার্ড সভাপতি। তার জীবন যেন এক সরলরেখায় চলছিল, যতক্ষণ না এক পুরনো পাওনা আর মামলার জাল তাকে গ্রাস করল।
শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪১ বছর বয়সী রুবেল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিযোগ উঠেছে, তার এই ‘আত্মহত্যার’ পেছনে রয়েছে গ্রামেরই বিএনপি নেতা গাজী হাসান মাহমুদ হানিফের অবিরাম চাপ।
গল্পের শুরুটা আরও পেছনে – ২০০১ সালে রুবেল তার ভাই মফিজের থেকে পৃথক হন। আর ২০১৬ সালে সেই মফিজের সঙ্গেই হানিফের মাছের খাদ্যের টাকা লেনদেন হয়। মফিজ টাকা পরিশোধ করতে না পেরে একসময় গ্রাম ছেড়ে বরগুনায় চলে যান, এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
কিন্তু গল্পের মোড় নেয় মফিজের মৃত্যুর পর। হানিফ তার পাওনা আদায়ে রুবেলকে টার্গেট করেন এবং তাকে আসামি করে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। রুবেলের স্ত্রী রেহেনা বেগমের অভিযোগ, গত ১৫ দিন ধরে হানিফ তার স্বামীকে এমন চাপ দিতে শুরু করেন যে, রুবেল ঘরের বাইরেও বের হতে পারছিলেন না। একের পর এক হুমকি, আরও মামলার ভয় – এমনকি বাড়িতে বাজার করার টাকাও ছিল না তাদের।
এই অসহনীয় চাপের মুখে রুবেল হয়তো তার শেষ আশ্রয় খুঁজেছিলেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি নিজ বাড়িতে বিষপান করেন। কিন্তু তার শেষ কথাগুলো রয়ে গেছে মোবাইলের রেকর্ডে। সেই রেকর্ডে রুবেল হানিফের ‘নির্যাতনের’ কথা বলেছেন, এমনকি আওয়ামী লীগের লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্য হানিফের চাপের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার চেয়েও পাননি বলে রেকর্ডে জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘ফরিদ’ নামে একজন এসবের ‘নাটের গুরু’। রুবেলের শেষ আকুতি ছিল—পুলিশ যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে।
যদিও অভিযুক্ত হানিফ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, এবং চান্দিনা থানার ওসি জানিয়েছেন, তাদের কাছে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি, তবুও কামারখোলা গ্রাম থেকে শুরু করে পুরো চান্দিনাজুড়ে এই ঘটনা এক গভীর প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। এক নিরীহ কৃষকের এমন মর্মান্তিক পরিণতি কি শুধুই পাওনা টাকার চাপ, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রেক্ষাপট – সে উত্তর হয়তো সুষ্ঠু তদন্তের পরই বেরিয়ে আসবে।