ডেস্ক নিউজ।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে দোহায় অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনা কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। আলোচনার সঙ্গে জড়িত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে দুটি পৃথক ভবনে আলোচনাটি হয়, তবে চুক্তির পথে উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি।
ওই কর্মকর্তা জানান, আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে কেবল বার্তা ও ব্যাখ্যা আদান-প্রদান হয়েছে, কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। মধ্যস্থতাকারীরা সোমবার আবারও উভয় পক্ষের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, আলোচনার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটনের পথে রওনা হন। নেতানিয়াহু বলেন, এই বৈঠক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতিতে সহায়তা করবে।
নেতানিয়াহু জানান, তিনি তার আলোচকদের পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন এমন একটি চুক্তির জন্য কাজ করতে, যা ইসরায়েলের জন্য গ্রহণযোগ্য। তার মতে, চুক্তির মূল লক্ষ্য হবে—জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস এবং গাজাকে ইসরায়েলের জন্য ভবিষ্যতে হুমকি হওয়া থেকে রোধ করা।
তবে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখালেও, মূল শর্তগুলো—যেমন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার—অপরিবর্তিত রয়েছে। এই শর্তগুলো ইসরায়েল এর আগে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাদের অবস্থানেও তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের হাতে বাস্তব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ছিল না, যা আলোচনার অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা এখনও কমেনি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় হামাসের ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুধু রবিবারই ৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
চলমান সহিংসতার মধ্যেও দোহায় আলোচনার টেবিলে সমঝোতার পথ খুঁজছেন কাতারি ও মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীরা। তবে রাজনৈতিক বিভাজন, কট্টরপন্থী চাপ এবং ময়দানের বাস্তবতা এই উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এখন যুদ্ধবিরতির জন্য জনমত বাড়ছে। শনিবার সন্ধ্যায় দেশটির নাগরিকরা রাজপথে নেমে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান—যাতে জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়। তবে তার মন্ত্রিসভায় এমন কয়েকজন কট্টরপন্থী রয়েছেন—যেমন নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গেভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ—যারা যুদ্ধবিরতির কঠোর বিরোধী।
চূড়ান্তভাবে এখনও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই আলোচনাগুলো কি সত্যিই এমন কোনও চুক্তি এনে দিতে পারবে, যা দুই পক্ষের জন্যই গ্রহণযোগ্য?