বিদেশে পাঠানোর নামে ১৮ কোটি টাকার প্রতারণা, ভুক্তভোগীদের ডিম ছোড়া, ১০ দিনের রিমান্ডে বিএসবি গ্লোবালের (BSB Global) চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠানোর নামে প্রায় ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারকে সোমবার আদালতে তোলা হলে ভুক্তভোগীদের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। কেউ স্লোগান দেন, কেউ চোখের পানি ফেলেন, কেউবা ডিম ছোড়ে মাথা ও বুক ঢেকে রাখা বাশারের দিকে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় বাশারকে। এসময় তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। আদালত চত্বরে থাকা দুই শতাধিক ভুক্তভোগী তাঁকে লক্ষ্য করে বিচার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন। বৃষ্টির মধ্যেও তাঁরা আদালতের হাজতখানার সামনেই অবস্থান করেন। বেলা তিনটার পর বাশারকে হাজতখানা থেকে বের করে এজলাসে নেওয়া হলে তাঁকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়। কিছু ডিম বাশারের মাথায় এবং পুলিশের ওপর পড়ে।
বাশারকে কাঠগড়ায় তোলার পর আদালতের প্রশ্ন ছিল, “আপনার জীবন তো জেলেই কেটে যাবে।” বিচারক যখন জানতে চান কীভাবে এত শিক্ষার্থীকে প্রতারিত করলেন, তখন বাশারের জবাব ছিল, “আমি পরিস্থিতির শিকার।” তবে কী পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তা তিনি পরিষ্কার করেননি।
সিআইডির উপপরিদর্শক খালিদ সাইফুল্লাহ আদালতে জানান, বিএসবি গ্লোবালের মাধ্যমে ১৪১ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। আর মোট ভুক্তভোগীর সংখ্যা ৪৪৮ জন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জামাল খন্দকার দাবি করেন, “প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।”
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরত চাইলে মারধর করা হতো। বাশার নিজস্ব ‘বাহিনী’ গঠন করে রাখতেন ভুক্তভোগীদের দমন করতে। এমনকি তাঁর হাতে মার খাওয়া শিক্ষার্থীদের ছবি এবং ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তোলা বাশারের ছবিও আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি শামছুদ্দোহা বলেন, “শিক্ষাকে যিনি ব্যবসায় রূপান্তর করেছেন, তিনি সমাজের জন্য একটি হুমকি। খায়রুল বাশার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন।”
আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এজলাস থেকে তাঁকে বের করে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময় আবারও স্লোগানে ফেটে পড়ে ভুক্তভোগীরা।
প্রতারিত শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার বলেন, “১০ লাখ টাকা দিয়ে কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। কিছুই হয়নি, টাকাও ফেরত পাইনি। এই টাকা দিতে বাবাকে সুদে ধার নিতে হয়েছিল। এখনো সেই সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।”