থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন থাই সেনাবাহিনীর এক সদস্যও। বিতর্কিত প্রেহা ভিহিয়ার মন্দির ঘিরে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, দুই দেশই একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক নামিয়ে এনেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
থাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, কম্বোডিয়া হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী বলছে, কম্বোডিয়া হামলায় অত্যন্ত হিংস্র অস্ত্র ব্যবহার করছে এবং দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে।
থাই সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিসাকেত, সুরিন, উবন রাতচাথানি এবং বুরি রাম প্রদেশে পৃথক হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সিসাকেতের বান ফু এলাকায় গ্যাস স্টেশনের কাছে হামলায় নিহত হন ৬ জন। সুরিন প্রদেশে নিহতদের একজন শিশু। সীমান্তবর্তী এলাকায় বসতবাড়ি ও কৃষি খামার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষের জেরে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে গুলিবিনিময় অব্যাহত থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে তা মোন থম মন্দির ঘিরে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে দুই থাই নাগরিক নিহত হন। এরপরই থাইল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নেয় এবং কম্বোডীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কম্বোডিয়াও তাদের কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেয় এবং থাই কূটনীতিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
সংঘর্ষের মধ্যেই থাইল্যান্ড সীমান্তে ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে। পরে তারা দাবি করে, কম্বোডিয়ার দুটি সামরিক সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে। এর জবাবে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থাইল্যান্ডের অভিযানে ক্ষোভ জানিয়ে এটিকে ‘নৃশংস সামরিক আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করে।
প্রেক্ষাপটে, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তবিরোধের মূল কেন্দ্র ঐতিহাসিক প্রেহা ভিহিয়ার মন্দির এবং তার আশপাশের ভূখণ্ড। ১৯৬২ সালে আইসিজে এই মন্দিরকে কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও থাইল্যান্ডে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়। ২০১৩ সালে আদালত পুনরায় রায় দিয়ে মন্দির-সংলগ্ন এলাকাও কম্বোডিয়ার বলে ঘোষণা করে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে এই রায় ঘিরে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ বারবারই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।