নিজস্ব প্রতিনিধি।
উপকূলীয় অঞ্চলের কর্মসংস্থান সংকট দূর করতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের নাসের আলী ব্রীজের পাশে একটি মিনি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হয়েছে। ডাক্তার হুমায়ুন কবীর ও ইয়াছিন আলীর উদ্যোগে এবং স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় এই গার্মেন্টসটি চালু করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ জন নারী-পুরুষ এখানে কর্মসংস্থান পেয়েছেন। ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটি বাড়িয়ে ৪০০ জনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। গার্মেন্টসটিতে স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাক দেশীয় বাজারে রপ্তানির লক্ষ্যে কাজ চলছে।
ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম, এই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ যেন নিজের এলাকায় থেকেই সম্মানজনক জীবিকা অর্জন করতে পারে। মিনি গার্মেন্টস প্রকল্প সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেরই একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ। গার্মেন্টস কর্মী ইয়াছিন আলীর উৎসাহে উপকূলের বেকারত্ব দূর করার কথা চিন্তা করেই মিনি গার্মেন্টসটি শুরু করেছি৷ আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জিন্স প্যান্টের কাজ নিয়ে আমরা কাটিং, সেলাই করে সম্পন্ন করে তাদেরকে দিবো ৷ আমাদের কাটিং মাষ্টার রয়েছে কিন্তু এইসব কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ট্রেনার দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা খুবই জরুরি ৷ বর্তমানে আমরা জাল ব্যাগ ও প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগ তৈরি করছি ৷ যেগুলো স্থানীয় বাজারজাত করছি ৷ খুবই কমদামে, ভালোমানের ব্যাগ আমরা বাজারজাত করতে পারছি ৷
স্থানীয়রা জানান, এই অঞ্চলের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দিন দিন বেড়েই চলেছে ঋণ। জড়িয়ে পড়ছে সুদের সাথে। একেবারে গরীব মানুষের আস্থা ৬ মাস ইটভাটা আর বাকি ৬ মাস সুন্দরবনের উপর নির্ভর। কিন্তু ইটভাটায় প্রতিনিয়ত হচ্ছে হয়রানি শিকার সহ বেড়ে চলেছে নির্যাতনের সংখ্যা। ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো, শ্রমিকদের জিম্মি করে ভাটায় কাজ করানোসহ ঠিকমতো মজুরি না দেওয়া, শ্রমিকেরা ন্যায্য পাওনা চাইলে খারাপ আচরণসহ মারধর করা সহ দূরদূরান্তে যাওয়া ইটভাটার শ্রমিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের জিম্মি করে রাখা ইত্যাদির শিকার হয়ে থাকে ৷ অন্যদিকে কয়েক মাস পরপর সুন্দরবন বন্ধের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার এ অঞ্চলের মানুষ ৷ সংসারের পুরুষের একার ক্ষেত্রে উর্পাজন করে জীবিকা নির্বাহ করা দায় হয়ে পড়ায় পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন এগিয়ে আসছে। বেকারত্বের কারণে অনেকেই ভিন্ন জেলায় গিয়ে কাজ করতেন। এখন নিজের বাড়ির পাশে কাজের সুযোগ পেয়ে তারা আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এনজিও প্রতিনিধিরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই মিনি গার্মেন্টস শুধু কর্মসংস্থান নয়, বরং নারী ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জলবায়ু-প্রবণ এলাকার টেকসই উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, আমরা বিভিন্ন দপ্তর থেকে উপজেলা ব্যাপি উন্মুক্তভাবে মহিলাদের আবেদনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি৷ তবে এ ক্ষেত্রে তারা আবেদন করতে পারে ৷ পরবর্তী ধাপে তারা প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে ৷