মাদারীপুর প্রতিনিধি।।
অবৈধভাবে ইতালী যাওয়ার সময় ঝড়োবাতাসে প্রচন্ড ঠান্ডায় তিউনিউসিয়ার ভুমধ্যসাগরে প্রাণ হারিয়েছে বাংলাদেশের সাত যুবক।
ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ২৯ জানুয়ারী এক অতি জরুরী নোটিশের মাধ্যমে সাত জনের নাম জানা গেছে। এর মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুরে। নিহত পাঁচজনের মধ্যে চার জনের ঠিকানা জানা গেছে। অপরজনের ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে,মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান হোসেন (২২), একই উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড় গ্রামের শাহাজালালের ছেলে জহিরুল (২০), ঘটকচর এলাকার কাশেম মোল্লার ছেলে সাফায়েত (১৯), পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি গ্রামের প্রেমানন্দ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদার রতন (২০)।
এছাড়া নিহতের তালিকায় বাপ্পী, ঠিকানা সদর উপজেলা লেখা থাকলেও এখন পর্যন্ত তার পরিবারের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের কেউ এখন পর্যন্ত বাপ্পীর সন্ধান পায়নি। এদিকে যাদের পরিবার নিহতের খবর জানতে
পেরেছে সেই পরিবারে বইছে শোকের মাতম।
নিহত জহিরুলের পিতা শাহাজালাল বলেন, আমার সন্তানের মারা যাওয়ার খবর আমরা সরকারি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলাম। প্রায় ১০/১২ দিন ধরে আমার ছেলের সাথে ফোনে কথা হয় না। দালালরা আমাদের কাছে ফোন করে বলেছে জহিরুল হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। যদি আমার সন্তান মারা যায় তা হলে তার লাশ যেন সরকার আমাদের কাছে এনে দেয়।
আরেক নিহত ইমরান হোসেনের বোন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, গত ২১ জানুয়ারীর পূর্বে ভয়েস ম্যাসেজের মাধ্যমে ইমরানের কথা শুনি। তার পর থেকে আরো কোন যোগাযোগ নেই। আমার ভাই মারা যাওয়ার কথা সরকারি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমার বাবা-মা এখন পর্যন্ত জানে না।
নিহত সাফায়েত এর বোনের জামাই রাসেল বলেন, সাফায়েত মারা যাওয়ার কথা আমি শুনেছি। সাফায়েতের সাথে যাওয়া বাড়ির পাশের আরো দুইজন জীবীত আছে। তারা ফোন করে আমাদের বলেছে সাফায়েত মারা গেছে।
দূতাবাসের চিঠি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারী ২০২২ লিবিয়া হতে ইতালি আসার পথে অতিরিক্ত ঠান্ডায় মৃত্যুবরণকারী অভিবাসী প্রত্যাশী ৭ জন বাংলাদেশির পরিচয় নিরুপণের জন্য ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের
কাউন্সিলর, শ্রমকল্যাণ মো. এরফানুল হক এর নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মৃত্যুবরণকারীদের সাথে জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসী প্রত্যাশীদের সাথে কথা বলে সাত জনের নাম জানতে পারেন। মৃতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মৃতদেহ সরকারি খরচে দেশে আনার জন্য এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যরা যাতে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়। সেই চিঠিতে ইতালি দূতাবাসের একটি ইমেল এর ঠিকানা দেয়া আছে।
দুূতাবাসের চিঠিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর, শ্রমকল্যাণ মো. এরফানুল হক এর সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন নিহত পরিবারের সদস্যরা চাইলে লাশ দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, যে সকল অভিবাসী প্রত্যাশী মারা গেছে, তাদের লাশ যাতে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায় আমরা তার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।