গরিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বাঘারপাড়া প্রতিনিধি ।। যশোরের বাঘারপাড়ার বরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এবার ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের গরীবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের উপর এঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সঠিক বিচার চেয়ে প্রাথমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই শিক্ষার্থীর মা। বর্তমানে যা তদন্তাধীন রয়েছে।
ভুক্তভোগী উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের জহুরপুর রামগোপাল বহুমুখী বিদ্যা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও গরীবপুর গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান একজন আর্টিষ্ট ও উপজেলার বরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সে উপজেলা সদর সংলগ্ন দোহাকুলা গ্রামের নূর আলী মোল্যার ছেলে। এর আগে ২০১৯ সালে মিজানুর রহমান বরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা করে। এ অভিযোগে বাঘারপাড়া থানায় মামলা হয়। এছাড়াও আগ-দোহাকুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েও একই রকম অভিযোগে মামলা হয়। মামলার কারণে মিজানুর রহমান বহিষ্কার হন। পরে বাদীপক্ষ মামলা প্রত্যাহার করলে পুণরায় আবার চাকুরি ফিরে পান।
ভুক্তভোগীর মা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, মিজানুর রহমান গত ৬ মে জহুরপুর ইউনিয়নের গরীবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়াল লিখনের কাজে আসেন। নির্যাতিতার স্কুল বন্ধ থাকায় সে বাড়িতেই ছিল। এ সময় বিদ্যালয়ের দোতলা থেকে বাতিল কাপড়ের টুকরো চেয়ে মেয়েকেটি ডাক দেন ওই শিক্ষক। কাপড়ের টুকরো দেওয়ার পর খাবার পানি আনতে বলেন তিনি। এ সময় মেয়েটি পানি নিয়ে দোতলায় উঠলে, বাড়িতে কে কে আছে জিজ্ঞাসা করেন মিজানুর রহমান। এরপর দেওয়াল লেখার কাজ বাদ দিয়ে এক হাত দিয়ে মেয়েটির মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ চেষ্টা করেন তিনি। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মেয়েটি আত্মরক্ষার্থে চিৎকার করলে অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে ছেড়ে দেন। পরে বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখান মিজানুর রহমান।
অভিযোগে ওই শিক্ষার্থীর মা আরও উল্লেখ করেছেন, দৌড়ে মেয়েটি বাড়িতে এসে মা ও বড় ভাইকে ঘটনা খুলে বললে স্থানীয় লোকজন জড়ো করে স্কুলে যাওয়ার আগেই মিজানুর দ্রæত স্কুল ত্যাগ করেন। ধর্ষণ চেষ্টার সময় গরীবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বা ম্যানেজিং কমিটির লোকও উপস্থিত ছিলেন না। এখন ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিবারটির উপর বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তিন কিলোমিটার দূরে জহুরপুর রামগোপাল বহুমুখী বিদ্যা প্রতিষ্ঠানে যেতেও ভয় পাচ্ছে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে সঠিক বিচার চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখার সহকারি পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, চন্ডিপুর ক্লাষ্টারের সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা, গরীবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এবং জহুরপুর রামগোপাল বহুমুখী বিদ্যা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর মা।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি ওই স্কুলে কাজ করতে গিয়ে মেয়েটির কাছে খাবার পানি চেয়েছিলাম। তখন সে পানি এনে দিয়ে চলে গিয়েছিল। একটি কুচক্রী মহল আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাসানোর চেষ্টা করছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক মিজানুরের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ আগেও ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। আদালত থেকে খালাশ পাওয়ায় পুণরায় চাকরি ফিরে পেয়েছেন। যা অফিসের রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে।