ডেস্ক রিপোর্ট।।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন দীর্ঘ ৮ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। দগ্ধ ও আহত হয়েছেন ২ শতাধিক। এদিকে বিস্ফোরণে ৭ জন শিল্প পুলিশ এবং ২ জন সীতাকুণ্ড থানার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক পুলিশ সদস্যের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে শনিবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় অগ্নিকাণ্ডে চারশরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে শ্রমিক, পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অনেককে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধদের জরুরি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই ডিপোতে ৫০ হাজারের বেশি কনটেইনার রয়েছে। কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পর কনটেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে তিন-চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়ি-ঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জানিয়েছেন, কেমিক্যালের কনটেইনার থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে একের পর এক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার সময় সেখানে কয়েকশ শ্রমিক কাজ করছিলেন। আহত-দগ্ধ বেশিরভাগ লোককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. রুবেল রানা জানান, ফায়ার সার্ভিসের কাছে রাত ৯টা ২৫ মিনিটে আগুনের খবর দেওয়া হয়। এরপর সেখানে প্রাথমিকভাবে আটটি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। পরে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট যোগ দেয়। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট কাজ করছে বলে জানা গেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনেরও ৯ কর্মী আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আগুন লাগার খবরে প্রথমে ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করে কুমিরা স্টেশনের সদস্যরা। সেখানে বিস্ফোরণের ফলে ৯ জন আহত হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিস্ফোরণে সীতাকুণ্ড থানার কনস্টেবল তুহিনের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও আরও ৮ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম রাশিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বিস্ফোরণের কারণে কনস্টেবল মোহাম্মদ তুহিন হোসেনের ডান পায়ের গোড়ালি গুরুতর আঘাত লেগে থেঁতলে গেছে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাসায়নিকের কনটেইনারে বিস্ফোরণের কারণে দুর্ঘটনাস্থলে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান শিকদার গণমাধ্যমকে জানান, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের কাছে রাত ৯টা ২৫ মিনিটে আগুনের খবর পাওয়া যায়। প্রথমে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয়রা সহায়তা করছে।