মোঃ নাজমুল ইসলাম সবুজ, বাগেরহাট প্রতিনিধি।।
বাড়ির জমি বিক্রিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ছেলের তোলা বসতঘরটি। কর্মজীবী ছেলে আকাশ থাকেন চট্টগ্রামে। বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন লালমিয়া হাওলাদার। কিন্তু টাকার লোভে গোপনে সেই জমি বিক্রি করে দেন লালমিয়া। বিক্রি করা জমিতে ঘর এবং তাতে স্ত্রী ও মেয়ে থাকার কারণে ক্রেতাকে জমি হস্তান্তর করতে পারছিলেন না তিনি।
বেশ কয়েকদিন ধরে স্ত্রীকে ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছিলেন লালমিয়া। কিন্তু স্ত্রী আয়শা বেগম স্বামীর এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে রাজি হননি। একপর্যায়ে স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘর থেকে নামিয়ে বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেন ওই পাষণ্ড। ভয়াবহ আগুনে দুইতলা কাঠের বসতঘর ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (৭ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু বসতঘর ও মালামাল রক্ষা করতে পারেননি। আগুনে ঘর ও মালামালসহ ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত লালমিয়া হাওলাদার পলাতক রয়েছেন।
ওই রাতেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের শান্তনা দেন। এছাড়া বুধবার দুপুরে শরণখোলা থানা পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে।
লালমিয়ার স্ত্রী আয়শা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলে আকাশ চট্টগ্রামে কাজ করে। ছেলে লাখ লাখ টাকা খরচ কইরা ঘর উঠাইছে। কিন্তু আমার স্বামী (লালমিয়া হাওলাদার) ঘরে আগুন দিছে। শুনছি ১০ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করছে। জমি খালি করার জন্যই সে এই কাজ করছে। টাকার লোভে তার মাথা খারাপ হইয়া গেছে। আগুন দেওয়ার পর সে (স্বামী) পলাইয়া গেছে।
লালমিয়ার ভাই মো. স্বপন হাওলাদার ও বোন তানিয়া বেগম জানান, তাদের ভাই লালমিয়া এক সপ্তাহ ধরে তার স্ত্রীকে ঘর সরিয়ে নিতে বলেন। ঘর না সরালে আগুন দেওয়ার হুমকি দেন। রাতে তার স্ত্রী ও মেয়েকে কুড়াল দিয়ে কোপানোর জন্য ছুটে যান। এ সময় ভয়ে তারা অন্য ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। তারা পাষণ্ড ভাইয়ের বিচার দাবি করেন তারা।
এ ব্যাপারে প্রতিবেশী শরণখোলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক সাব্বির আহম্মেদ মুক্তা এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মহিউদ্দিন জানান, বাড়ির জমি বিক্রির জন্য লালমিয়া নিজেই ঘরে আগুন দিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।