আজিজুল ইসলাম।
উপানন্দ পালের (৪৪) বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন। পাশাপাশি গ্রামে চাষ আবাদ করেন। গ্রামে বিদেশি ফল চাষের উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেন ড্রাগন চাষ।
উপানন্দ পালের ড্রাগন ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ড্রাগন ফলের সমারোহ। প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি কংক্রিটের খুঁটি পেঁচিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। প্রতি গাছে ঝুলছে কাঁচা, পাকা ও আধা পাকা ড্রাগন ফল। তার ড্রাগন ক্ষেতে রয়েছে ১৬৪ টি কংক্রিটের খুঁটিতে প্রতিটিতে চারটি হিসেবে মোট ৬৫৬ টি গাছ।
বাগানে কথা হয় বাগানের মালিক উপানন্দ পালের সাথে। তিনি বলেন, ড্রাগনের ছোট ডিবি কেটে নিয়ে চারা করি। চারাগুলো একটু বড় হলে পূর্ণাঙ্গভাবে রোপণ করা হয়। ড্রাগন গাছে রাতে ফুল ফোটে, তখন ফুলে পরাগায়ন করা হয়। এতে ফল বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়া পোকামাকড় ও পাখির উপদ্রব থেকে ফলকে সুরক্ষিত রাখতে ড্রাগন ফল পলিব্যাগের ভেতরে রাখা হয়। স্কুল ছুটির পরে তিনি এগুলো দেখাশোনা ও পরিচর্যা করেন।
উপানন্দ পাল জানান সখের বশে ২০ শতক জমিতে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছি । ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ড্রাগনের চারা রোপন করি। এতে আমার ১৬৪ টি কংক্রিটের খুঁটি, টায়ার ও চারিদিকে তারের বেড়া দিতে মোট ১লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। যেহেতু ড্রাগন বিদেশি ফল,অনেকেই শঙ্কা করছিল এই গাছে ফল হবে কী না। তারপরও আমি ড্রাগন ফলের চাষ করি। প্রতি মাসে সার প্রয়োগ ও আগাছা পরিষ্কার করতে তিন হাজার টাকা খরচ করতে হয়। ৫/৬ মাসের মধ্যে গত জুন মাসে ড্রাগনে ফল আসা শুরু করেছে। এখন ফলন ভালোই হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি। এ মৌসুমে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। আর আগামি বছর প্রতি মাসে প্রতি খুটিতে ২০ কেজি হিসেবে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে নানা ধরণের বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ড্রাগন ফলের চাষ বেশি। অন্যান্য গলের মধ্যে মাল্টা,রাম্বুটান,কমলা, ইত্যাদি। দেশি বাজারে এসব ফলের চাহিদা থাকার কারণে এখন অনেকেই ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কয়েক বছর আগেও ড্রাগন ও রাম্বুটান ফল ছিল বড় বড় সুপার শপের শৌখিন ফল। জাহাজ বা প্লেনে চড়ে আসতো বিদেশ থেকে। ধনীদের বাজারে থলেতে উঠতো চড়া মূল্যের বিনিময়ে। বর্তমানে ফুটপাতে ঝুঁড়িতেও বিক্রি হচ্ছে এসব ফল।
জানা যায়, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি হওয়ায় দিন দিন ড্রাগন এর চাহিদা বাড়ছে। চাহিদার পাশাপাশি বাজারে এর দাম চড়া। সরেজমিনে স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ফুটপাত ও স্থানীয় বাজারে ড্রাগন ভরপুর। ড্রাগন কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত । এসব ফলে বেশ চাহিদা রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।