।। লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল।।
খাজুরা এমএন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়েটি যে নামে প্রতিষ্ঠিত তার পুরো নাম মনিন্দ্রনাথ মিত্র। এমএন মিত্রের বড় ছেলে অশোক মিত্র অতি শৈশবে দেহ ত্যাগ করেন।
মনিন্দ্রনাথের দ্বিতীয় পুত্র শংকরপ্রসাদ মিত্রের জন্ম ১৯১৭ সালে কলকাতায়। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে ১৯৩৯ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখান থেকে বিএ এবং এমএ ক্যানটব ডিগ্রি লাভ কারে লন্ডনের নক্সলস্ধসঢ়; ইন্ধসঢ়; থেকে ব্যারিস্টার হন। বিলাতে থাকা অবস্থায় কেমব্রিজ মসলিসের সভাপতি, গ্রেটব্রিটেনে ভারতীয় ছাত্র সমাজের অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক, লন্ডন স্বরাজ হাউজের সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৪২ সালে গ্লাসগোতে এবং ১৯৪৩ সালে নিউক্যাসলে ভারতীয় রাজনৈতিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এ সভাগুলির উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থন।
তিনি ১৯৪৪ সালে ভারতে ফিরে এস বঙ্গবাসী কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয় আইন কলেজের অধ্যাপক হন ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় পোস্ট গ্রাজুয়েট ক্লাসের লেকচারার হন। ঐ সময় তিনি কলকাতা হাই কোর্টে প্রাকটিস শুরু করেন। ১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী রূপে তিনি বাংলার বিধান সভার সদস্য হন। ১৯৫৬ সালের জুন মাসে বাংলার ভূমি রাজস্ব বিভাগের মন্ত্রী হন। তার চেষ্টায় কলকাতার সিটি দায়রা ও দেওয়ানী আদালত স্থাপিত হয়। বাংলার বাহিরে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলিকে ফিরে পাবার আন্দোলনের সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি “এসআরসির” সামনে কাছাড় জেলা কংগ্রেসের পক্ষ সমর্থন করেন। তিনি অর্থনৈতিক উন্নতি পরিষদ ভারতীয় শক্তি মিশন, ডেফ এন্ড ডাস্ব স্কুল, গুরুদাস ইস্টিটিউশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি মহাজাতি সদনের একজন ট্রাস্টি।
এছাড়া কলকাতা ও তার আশপাশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি অনেক নিঃস্ব স্ত্রীলোককে অনাথ আশ্রম বা অন্যত্র রেখে জীবিকার ব্যবস্থা করেছিলেন। নিজ গ্রাম লেবুতলায় তিনি তার ছোট ভাই ভাস্কর প্রসাদ, পিতা মনিন্দ্রনাথের স্মৃতি রক্ষায় মনীন্দ্রনাথ মিত্র ইনস্টিটিউশনে কয়েক হাজার টাকা ও সহায় সম্পদ দিয়েছিলেন। তিনি কয়েক বছর ভারত সরকারের জুনিয়র স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলার ছিলেন। তিনি পশ্চিম বাংলার এ্যাডভোকেট জেনারেল স্যার এসএম বসুর একামাত্র কন্যা শ্রীমতি অলোকা রানীকে বিবাহ করেছিলেন। ১৯৫৭ সাল থেকে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত হন।
২০১২ সালের ৯,১০ও ১১ই মার্চ খাজুরা এম এন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে “গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র“ আয়োজিত গ্রামীন জীবনযাত্রা ও কৃষি প্রযুক্তি তথ্য,বীজ মেলার অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে দেশ তথা অত্র অঞ্চলের ৩০ জন গুনীজনের সম্মাননা প্রদান করা হয়। মরনোত্তর গুনীজন সম্মাননার মধ্যে মি. শংকর প্রসাদ মিত্র ছিলেন অন্যতম একজন।