ফেনীতে গরুর খামারে শ্রমিকদের অস্ত্র ঠেকিয়ে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ১৩টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জেলার ৫ হাজারের বেশি খামারির মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও অতঙ্ক। এদিকে খবর পেয়ে শনিবার (৮ জুন) বিকেলে ফেনী পুলিশ সুপার জাকির হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা যায়, দাগনভূঁঞা উপজেলার রাজাপুর পূর্ব জয় নারায়ণপুর খান এগ্রো ফার্মে শুক্রবার (৭ জুন) দিবাগত গভীর রাতে খামারে প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে শ্রমিকদের বেঁধে লুট করা হয় ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ১৩টি শাহীওয়াল জাতের গরু।
খামার মালিক ও শ্রমকিরা জানান, শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে ১৮/২০ জনের একদল ডাকাত খামারের পেছনের টিন কেটে প্রবেশ করে খামারের ভেতরে থাকা শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে এক এক করে ১৩টি গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। কিছু গরুকে দড়ি কেটে ছেড়ে দেয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা খামারের শ্রমিকদের মারধর করে।
খামার মালিক অ্যাডভোকেট দাউদ খান ও মো. এমরান হোসেন বলেন, কুরবানির ঈদে বিক্রি করার জন্য ২১টি গরু খামারে আনি। গরুগুলোর মধ্যে ১৩টি গরু ডাকাতদল নিয়ে যায়। কুরবানের ঈদে বিক্রি করে লাভের আশায় মানুষ থেকে ঋণ নিয়ে খামারে এ গরুগুলি আনি। গরু উদ্ধারের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি। দুর্বৃত্তরা খামারের শ্রমিকদের মারধর করেছে। লুট হওয়া গরুগুলো উন্নতমানের শাহীওয়াল জাতের। প্রতিটি গরুর ওজন ৬ মণের বেশি। প্রতিটির বাজার মূল্য রয়েছে দুই লাখের বেশি।
খামার শ্রমিক আবদুর রহমান ও আহম্মদ মিয়া জানান, খামারের পেছনের টিন কেটে ডাকাতদল খামারের ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ১৩টি গরু নিয়ে যায়। ভোর বেলায় মুসল্লিারা নামজা পড়তে এলে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় আমাদের উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনাটির বিষয়টি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। অভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। খামার মালিকদের অনুরোধ করছি, তারা যেন খামার পাহারার জন্য প্রাথমিকভাবে অন্তত সিসি ক্যামেরা বসান। তাতে চুরি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং চুরি হলেও চোরদের শনাক্ত করতে সহজ হয়।
এক বছরে ফেনী জেলায় গরু চুরির ঘটনায় ২২টি মামলা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, চুরি হওয়া গবাদিপশুর সংখ্যা ৪৯টি। বেসরকারী হিসেবে চুরির ঘটনা অনেক বেশী। ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন কারণে মামলা না করায় থানায় রেকর্ড থাকে না। চলতি মৌসুমে ফেনীর ৫ হাজার ২২৫ জন খামারি তাদের খামারে ৯০ হাজার ২৫০টি পশু বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে পালন করেছেন।
এদিকে খামারে ঢুকে এভাবে লুটের ঘটনায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে জেলার ৫ হাজারের বেশি খামারির মাঝে। খামারিরা জানান, এলাকায় পুলিশের টহল আরও জোরদার থাকলে এমন ঘটনা ঠেকানো যেত। পুলিশ চাইলে লুট হওয়া গরুগুলো উদ্ধার করা সম্ভব।