মাহেদি হাসানের অলরাউন্ড নৈপুন্যে দারুণ জয় দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আজ সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। মহান বিজয় দিবসটি জয়ে রাঙালো লিটন-মাহেদিরা।
ব্যাট হাতে ২৪ বলে অপরাজিত ২৬ রান করার পর বল হাতে ১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক হয়েছেন মাহেদি। পাশাপাশি দলের অন্যান্য বোলারদের পারফরমেন্সও ছিলো চোখে পড়ার মত। বিশেষভাবে শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে যখন জয়ের জন্য ১০ রান দরকার, তখন মাত্র ২ রানে প্রতিপক্ষের শেষ ২ উইকেট শিকার করে সিরিজে বাংলাদেশকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন পেসার হাসান মাহমুদ।
সেন্ট ভিনসেন্টে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ২ ওভারে উইকেট না পড়লেও তৃতীয় ওভারে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার আকিল হোসেন। ১টি চারে ১১ বলে ৬ রান করা তানজিদ হাসানকে বোল্ড করেন আকিল।
তানজিদের বিদায়ে ক্রিজে এসে প্রথম বলেই আকিলকে সহজ ফিরতি ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। আকিলের হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাকে রুখে দেন প্রায় এক বছর পর দেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা আফিফ হোসেন। কিন্তু নিজের ফেরার ম্যাচকে স্মরনীয় করে রাখতে পারেননি আফিফ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনার রোস্টন চেজের বলে সুইপ করে শর্ট থার্ডম্যানে আকিলকে ক্যাচ দেন ২টি চারে ৮ রান করা আফিফ
পাওয়ার প্লের শেষ বলে চতুর্থ উইকেট হারাতে পারতো বাংলাদেশ। চেজের বলে ওপেনার সৌম্য সরকারকে ক্যাচ আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান সৌম্য। দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর সৌম্য ও জাকের আলির ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। নবম ওভারে ৫০ রান পূর্ণ হয় টাইগারদের।
১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে সৌম্যর সাথে জুটিতে ৫০ পূণ করেন জাকের। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে পেসার রোমারিও শেফার্ডের বলে লং অনে রোভম্যান পাওয়েলকে ক্যাচ দেন তিনি। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৭ বলে ২৭ রান করেন জাকের। সৌম্যর সাথে ৪২ বলে ৫৭ রান যোগ করেন জাকের।
দলীয় ৮৭ রানে জাকের ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সৌম্য। দলের রান ১শ হবার আগেই পেসার ওবেড ম্যাককয়ের বলে বোল্ড হন সৌম্য। ৩২ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৩ রান করেন সৌম্য। ১৫ ওভারে ৯৬ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে ২৯ বলে ৪৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন মাহেদি হাসান ও এক বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা শামীম হোসেন। ১৬তম ওভারে ৯ রান, ১৭তম ওভারে ১১ রান, ১৮তম ওভারে ১০ ও ১৯তম ওভারে ১২ রান তুলেন। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন শামীম। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৩ বলে ২৭ রান করেন শামীম। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ২৬ রান করেন মাহেদি। বাংলাদেশ পায় ৬ উইকেটে ১৪৭ রানের সংগ্রহ। আকিল ও ম্যাককয় ২টি করে উইকেট নেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৮ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে বল হাতে দারুন শুরু করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার ব্র্যান্ডন কিংকে ১ রানে বিদায় করেন পেসার তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে নিকোলাস পুরানকে ১ রানে থামান স্পিনার মাহেদি। ২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তৃতীয় উইকেটে ১৫ বলে ৩১ রানের জুটিতে পাওয়ার প্লেতেই দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন জনসন চালর্স ও চেজ। কিন্তু পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন মাহেদি। ২টি করে চার-ছক্কায় ১২ বলে ২০ রান করা চার্লসকে শিকার করেন মাহেদি।
৩৩ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের ব্যাটিং ধস নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ৬১ রানে পৌঁছাতেই সপ্তম উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। সপ্তম ওভারে আন্দ্রে ফ্লেচারকে শূন্য ও চেজকে ৭ রানে মাহেদি, ১১তম ওভারে গুদাকেশ মোতিকে ৬ রানে পেসার তানজিম হাসান সাকিব এবং পরের ওভারে আকিলকে ২ রানে আউট করেন স্পিনার রিশাদ হোসেন।
এরপর অষ্টম উইকেটে ৩৩ বলে ৬৭ রানের ঝড়ো জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের সম্ভাবনা জাগান অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল ও শেফার্ড। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে শেফার্ডকে ২২ রানে আউট করে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাসকিন। শেফার্ড ফেরার পর শেষ দুই ওভারে ১৮ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৯তম ওভারে ৮ রান আসলে শেষ ওভারে ১০ রানের সমীকরণ পায় ক্যারিবীয়রা।
শেষ ওভারে বল হাতে প্রথম দুই বলে মাত্র ১ রান দেন হাসান মাহমুদ। তৃতীয় বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ তুলে দেন রোভম্যান। চতুর্থ বলে বাই থেকে আসে ১ রান। পঞ্চম বলে আলজারি জোসেফকে বোল্ড করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪০ রানে গুটিয়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ চার ম্যাচে হারের বৃত্ত ভেঙে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৬০ রান করেও দলের হার রুখতে পারেননি দলনেতা রোভম্যান।
৪ ওভারে ১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফল বোলার মাহেদি। ৫২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটিই সেরা বোলিং ফিগার মাহেদির। এছাড়া হাসান-তাসকিন ২টি করে এবং তানজিম ও রিশাদ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাহেদি।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর কিংসটাউনে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৪৭/৬ (সৌম্য ৪৩, শামীম ২৭, জাকের ২৭, আকিল ২/১৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৯.৫ ওভারে ১৪০/১০ (রোভম্যান ৬০, শেফার্ড ২২, মাহেদি ৪/১৩)।
ফল : বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মাহেদি হাসান (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।