ডেস্ক নিউজ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে আর কোনো দেশের রাষ্ট্রগঠনে হস্তক্ষেপ করবে না। রিয়াদে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি জানান, বিশ্বকে ‘কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে’ তা শেখানো যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ১৩ মে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে দেওয়া এ বক্তব্যে ট্রাম্প কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্যনীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন। তার এই বক্তব্যে উপস্থিত অতিথিরা করতালিতে ফেটে পড়েন।
ট্রাম্প বলেন, যারা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছেন, তারা বরং দেশ ধ্বংসই করেছেন বেশি। তাদের অনধিগম্য সমাজে হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে এনেছে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের জনগণকে আহ্বান জানান নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করতে।
এই ঘোষণার পেছনে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ইয়েমেনে চলমান সংঘাতের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। ট্রাম্পের এই বক্তব্য এসব প্রসঙ্গকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়ায় সৌদি শিক্ষাবিদ সুলতান আলআমের বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য ঔপনিবেশিকবিরোধী চিন্তাবিদ ফ্রাঞ্জ ফাঁনোর লেখার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইয়েমেনের এক নাগরিক ট্রাম্পের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যদিও বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন।
চার দিনের উপসাগরীয় সফরের শুরুতেই এই বক্তব্য দেন ট্রাম্প। সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা ও ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি উঠে আসে আলোচনায়।
তবে কূটনৈতিক বার্তাও ছিল স্পষ্ট। ট্রাম্প সৌদি আরবকে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান, যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া এমন পদক্ষেপ বিবেচনায় নেওয়া হবে না। পাশাপাশি, তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বলেন, তিনি ‘চিরশত্রু’ শব্দে বিশ্বাস করেন না।
এ সফরের সময় ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টি কাড়ে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘অসাধারণ একজন মানুষ’ বলে প্রশংসা করেন ট্রাম্প, যার মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনের মন্থর ও মানবাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপকারী কূটনীতির তুলনায় ভিন্ন বার্তা স্পষ্ট হয়।
তবে সমালোচনাও এসেছে। সৌদি আরবে বন্দি এক আলেমের ছেলে আবদুল্লাহ আলাওধ বলেন, ট্রাম্প যখন বলছিলেন ‘মধ্যপ্রাচ্য গড়েছে এখানকার মানুষ’, তখন তার পাশে ছিলেন বিদেশি ধনকুবের আর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক স্বৈরশাসক।
রিয়াদে দেওয়া ভাষণ শেষে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘অংশীদারিত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের দৃষ্টিভঙ্গি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে এমন কিছু ধারণা উঠে এসেছে, যেগুলো সাধারণত বামপন্থি ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী তত্ত্বে দেখা যায়—যা বর্তমানে ডানপন্থি জনতাবাদী আন্দোলনগুলোও ব্যবহার করছে।