1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
সুন্দরবনের নদীসহ খালে বিলে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন, বাড়ছে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০৬:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
অভয়নগরে মাছের ঘেরে পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু; ১৮ঘন্টা পর লাশ উদ্ধার কোস্ট গার্ডের অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর ১ সহযোগী আটক জলবায়ু কনটেন্ট রিপোর্টারদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ইরানের ৬ বিমানবন্দরে অতর্কিত হামলা, প্রায় ১৫ টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস যাত্রীবাহী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী নিহত, আহত বাবা চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার স্বর্ণসহ যুবক আটক বাংলা প্রথমপত্র স্থগিত নয়, নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা: যশোর বোর্ড কুড়িগ্রামে ট্রাক কেড়ে নিলো পথচারীর জীবন কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে নারীর মৃত্যু ১০ লাখ টাকায় মিসাইল ড্রোন! তরুণ উদ্ভাবকের দাবি আলোচনায়

সুন্দরবনের নদীসহ খালে বিলে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন, বাড়ছে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫
  • ৫৯ জন খবরটি পড়েছেন

নিজস্ব প্রতিনিধি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিক ও পলিথিন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত উপাদানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন বাজার থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতেও প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান বা ডাস্টবিন না থাকায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মাছ কাঁকড়ার আড়ৎ, বাজারের সকল দোকান ব্যবসায়ী ও নদী পাড়ের বসত বাড়ির ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন সহ সকল প্রকার ময়লা আবর্জনা বহু বছর ধরে ফেলা হচ্ছে সুন্দরবনের নদীতে।

ফলে জোয়ার-ভাটায় বন সংলগ্ন লোকালয় থেকে এসব প্লাস্টিক ও পলিথিন নদীর পানিতে ভেসে বনে যায়। এছাড়াও বন সংলগ্ন গ্রামের নদী-খাল হয়ে জোয়ারের সময় ওয়ান টাইম প্লাস্টিক গ্লাস ও প্লেট প্রভৃতি বনের মধ্যে চলে যাচ্ছে। বনের মাটি ও পানিতে উদ্বেগজনক হারে মিলেছে মাইক্রো-প্লাস্টিকের উপস্থিতি। এই প্লাস্টিক দূষণ হুমকি বাড়াচ্ছে জলজ ও স্থল বন্যপ্রাণী এবং বনের গাছপালার। বনের যেসব এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি সেখানে প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণও বেশি।

সাতক্ষীরার আকর্ষণ সড়ক পথে সুন্দরবন। তাই সুন্দরবন দেখার জন্য প্রতি বছর বিদেশ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা মুন্সিগঞ্জ ও নীলডুমুর এলাকাতে আসে। এ এলাকায় সারা বছর পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে। তবে আজও পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নাই কোনো ব্যবস্থা বলে অভিযোগ পর্যটন এলাকার মানুষদের। সুন্দরবনে ও নদীর মধ্যে পর্যটক ও বনজীবীরা যেখানে সেখানে পলিথিন, চিপস, চানাচুর ও বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, প্লাস্টিকের কাপ, প্লাস্টিকের গ্লাস ও প্লেট প্রভৃতি ফেলে থাকে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকায় বিয়ে, খানা পিনা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক প্লেট ও গ্লাস ব্যবহার করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে এ সমস্ত প্লাস্টিক বস্তা বন্দী করে ফেলা হয় নদীতে। এসময় তারা বলেন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা হলে নদীতে আর কেহ বর্জ্য প্লাস্টিক পলিথিন ফেলতো না।

নীলডুমুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমএ হালিম বলেন, নীলডুমুর বাজার এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করতে আসেন, পলিথিন, প্লাস্টিক যাবতীয় বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে যায়। এই ময়লা আমাদের দোকোনিরা পরিষ্কার করার পর ওই বর্জ্য নদীতে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নাই।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী, আটুলিয়া, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী, রমজাননগর, নুরনগর, পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নের নদী পাড়ের দোকান ব্যবসায়ী ও বসতবাড়ি ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন সহ সকল প্রকার ময়লা আবর্জনা নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও শ্যামনগর পৌরসভার বাজারের দোকান ব্যবসায়ী, মাছের আড়ৎ, কলকারখানা, ইটভাটা, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসায়ীদের প্লাস্টিক, পলিথিন সহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জানা আদি যমুনা নদী সহ খালে বিলে ফেলা হয়। ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

লেখক গবেষক পীযূষ বাউলিয়া পিন্টু বলেন, পলিথিন, চিপস, চানাচুর ও বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, প্লাস্টিকের কাপ, প্লাস্টিকের গ্লাস, প্লেট, ময়লা আবর্জনা প্রভৃতি বহু বছর ধরে ফেলা হচ্ছে সুন্দরবনের নদীতে। যা বন, নদী ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রে বানরের পলিথিনে খাবার খেতে দেখা যায়। এসব দ্রব্য বছরের পর বছর নষ্ট হয় না। প্লাস্টিক সামগ্রী ক্ষয় হতে হাজার বছরেরও বেশি সময় লাগে। এগুলো কখনো পচেও না বা গলেও না অর্থাৎ অপচনশীল দ্রব্য। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আমরা পরিবেশবান্ধব যেমন পাটের ব্যাগ, বেতের তৈরি ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। এগুলো মাটিতে সহজে মিশে যায় এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। পানি, তেল, মশলা ইত্যাদি রাখার জন্য কাঁচের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঁচের বোতল পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব। অপরদিকে, আইনের পরিধি আরও বাড়িয়ে পলিথিন ব্যবহারের জন্য জরিমানা এবং অন্যান্য শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জিয়াউর রহমান বলেন, পলিথিন পোড়ালে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। এগুলো শ্বাসনালির প্রদাহ, অ্যাজমা, এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিন ধীরে ধীরে ছোটো ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক অস্ত্রের ক্ষতি, রক্তে প্রদাহ, এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। নদী-নালা বা সমুদ্রের পলিথিন বর্জ্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই দূষিত জলজ প্রাণী যখন মানুষ গ্রহণ করে, তখন তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। পলিথিন একটা নির্দিষ্ট স্থানে রাখলে তা সূর্যের তাপে একটা সময় পর নষ্ট না হয়ে আশেপাশের পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে, সর্বপরি স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিন ব্যবহার থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, পলিথিন সহজে মাটিতে মিশে না। এটি মাটির উপরে একটি আস্তরণ তৈরি করে, যার ফলে মাটির স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পলিথিনের উপস্থিতি মাটিতে উপকারী জীবাণু ও কীটপতঙ্গের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে, ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। পলিথিনের কারণে মাটিতে পানি জমে থাকে, ফলে ফসল নষ্ট হয় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পলিথিন উৎপাদনের সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। ফলে ফসল উৎপাদন কমে যায়।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার তুষার মজুমদার বলেন, পলিথিনের কণা নদী, খালের পানি দূষিত করে। মাছের প্রজননে ব্যহতসহ মৎস্য উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হয়। পলিথিন পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে, ফলে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং মানুষের জন্য পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনী খাতুন বলেন, পলিথিনের ক্ষতিকরদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ, ব্যবহারকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। নদীকেন্দ্রিক বাজারগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উপকূলের নদীর ধারে অবস্থিত বাজার কেন্দ্রীক বর্জ্যব্যবস্থাপনা তৈরি করব। এবং আইন শৃঙ্খলা মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোচনা রেখেছি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছি অতি তাড়াতাড়ি বাজার কেন্দ্রিক কিছু বর্জ্যব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের কাছে সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকরা কোন ধরনের প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্য ফেলে কি না এবং ফেললে আইনি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে গেলে কোনভাবেই প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলার সুযোগ থাকেন না, কারণ বনবিভাগের পক্ষ থেকে গাইটম্যান দেওয়া হয় প্রতি ট্রলারে একজন করে। সুন্দরবনে ও নদীতে প্লাস্টিক ও পলিথিনের মত বর্জ্য ফেললে তাকে আইনের আওতায় এনে জরিমানা করা হয়। ২৩,২৪ ও ২৫ সালের মে ১ তারিখ পর্যন্ত কয়েকটি ট্রলার মাঝি ও তার ট্রলার কে জরিমানা ও সাসপেন্ড করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন পর্যটক বাহী ট্রলারে কোনো প্রকার প্লাস্টিক দ্রব্য বহন করতে দেওয়া হয় না।

প্লাস্টিক, পলিথিন ও নেট জালের ব্যবহারের ক্ষতি ও ভয়াবহতা নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বেসরকারি এনজিও রুপান্তরের পক্ষ থেকে কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা পরিবেশ দিবসে উপকূলের মানুষের জন্য ১০ হাজার পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ফ্রীতে বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও তারা স্কুল কলেজের শিক্ষক – শিক্ষিকা, ছাত্র – ছাত্রী, রাজনীতিবিদ, পুরোহিত, ইমাম, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, সরকারি অফিসার, সংবাদ কর্মী, বিভিন্ন এনজিও সংগঠনকে নিয়ে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক, পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত ও জনগনকে সচেতনত করতে বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews