ডেস্ক নিউজ।
ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত গাজা থেকে এসে হজ পালন করলেও আত্মিক শান্তি পাচ্ছেন না ফিলিস্তিনিরা। তাঁদের অনেকে যুদ্ধের ভেতর ফেলে এসেছেন পরিবার। তেমনই একজন মোহাম্মদ শেহাদে, যিনি বলছেন, “জীবনের সবচেয়ে পবিত্র জায়গায় এসেছি, কিন্তু সুখী হতে পারছি না—কারণ, পরিবার আমার পাশে নেই।”
৩৮ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী বর্তমানে সৌদি আরবে হজ পালনে এসেছেন। চিকিৎসার জন্য গাজা ছাড়ার অনুমতি পেলেও তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তান রয়ে গেছেন গাজার গোলাগুলির মধ্যে। তিনি বলেন, “আমি গাজা ছাড়ার সময় যেন দুই আগুনের মাঝে পড়েছিলাম—চিকিৎসা নেব, না পরিবারের কাছে থাকব।”
শুধু শেহাদেই নন, গাজার আরও শত শত বাসিন্দা হজ পালন করছেন এবছর। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ১,৩৫০ জন গাজাবাসী ও সৌদি বাদশাহর অতিথি হিসেবে আরও ৫০০ জন ফিলিস্তিনি এবার হজে অংশ নিচ্ছেন। যদিও অনেকেই বলছেন, পবিত্র স্থানেও তাঁরা শান্তি পাচ্ছেন না।
“আমার ঘর নেই, ব্যবসা নেই, শুধু ভয় আর দুশ্চিন্তা আছে,” বলেন গাজার আরেক ব্যবসায়ী রজায়ি রাজেহ আল-খালুত, যিনি মিসরে পালিয়ে গিয়েছেন পরিবারসহ। তাঁর ভাষায়, “হজের সময় আনন্দের হওয়ার কথা, কিন্তু আমার মনে কেবল আশঙ্কা।”
ষাটোর্ধ্ব এক বিধবা নারী বলেন, গত বছর গাজা থেকে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার পর তাঁর ১০ সন্তানকে তিনি আর দেখেননি। তিনি বলেন, “আমি প্রার্থনা করি, ফিলিস্তিনের শিশুদের জন্য, যারা ক্ষুধা আর যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক ও লাগাতার হামলা শুরু করে। ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরুর পর কমপক্ষে ৪,১৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মোট নিহত ৫৪,৪১৮ জন, যাঁদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি “খুব কাছাকাছি”। তবে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
শেহাদে বলেন, “আমি এখন আশাবাদী হতে ভয় পাই। কারণ, তখন হতাশ হওয়াটা আরও কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।” মক্কার পবিত্র স্থানগুলোতে অবস্থান করেও যাঁদের হৃদয়ে যুদ্ধের ক্ষত—তাঁদের প্রার্থনা একটাই: শান্তি ও পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন।