কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল পরিচয়ে হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে তিন দফা দাবি জানিয়েছে সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ জোবাইর হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্যটি জানানো হয়। এবং এর একটি অনুলিপি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সংগঠনটি জানায়, হলে ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম হৃদয় সম্প্রতি একাধিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়েছেন।
এসব ঘটনার পেছনে ছাত্রদল পরিচয়ে কিছু শিক্ষার্থীর ভূমিকার অভিযোগ উঠে এসেছে।লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে হল প্রশাসনের নির্দেশে দ্বীন ইসলাম হৃদয়কে ১০৪ নম্বর কক্ষ থেকে ১০৩ নম্বর কক্ষে স্থানান্তর করা হয়। সেদিন রাতে টিউশন শেষে তিনি নতুন কক্ষে গেলে, ওই কক্ষের শিক্ষার্থী রোমান (বাংলা-১৮) ও ইউনুস (বাংলা-১৮) তাঁর সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, তাঁরা দ্বীনকে বলেন, “হলে উঠার, হলে থাকার কিছু রুলস আছে, চাইলেই কেউ হলে উঠতে পারে, না, হলে থাকতে হলে কষ্ট করতে হয়।”
এতে ভুক্তভোগী প্রতিবাদ করলে রোমান উচ্চৈঃস্বরে বলেন, “আস্তে কথা বলুন, আপনি এখনো হলে থাকেন না।”
আর ইউনুস যোগ করেন, “প্রশাসন মুখ্য না, প্রশাসন চাইলেই কাউকে শিফট করতে পারে না।”ঘটনার সময় উপস্থিত কয়েকজন ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী পুরো ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন এবং সাক্ষী হিসেবে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ঘটনার পরপরই হল প্রশাসন অভিযুক্তদের সিট বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, তবে পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত রহস্যজনকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।এরপর থেকেই ঘটনাটি জটিল আকার ধারণ করে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে দ্বীন ইসলাম হৃদয় জানান, তিনি ছাত্রদল পরিচয়ে কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
লাইভে তিনি বলেন, “আমি এখন শঙ্কিত, আমি এখন আতঙ্কিত। আমাকে শুধু এতটুকু নিশ্চিত করুন যে, ছাত্রদল আমার কিছু করবে না।”
লাইভের পর তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টে লেখেন, “আমি তো সব ভুলে গিয়ে জুনিয়রদের ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। বিষয়টি বাড়াইনি। তাহলে কেন ছাত্রদলের পোলাপান রুমে এসে আমাকে এগ্রেসিভভাবে কথা বলবে? একেবারে সাধারণ একটি ছেলেকে কেন এভাবে ট্রমাটাইজড রাখা হবে?”
এ ঘটনায় সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিহীন সন্দেহে হয়রানি ও মানসিক চাপে রাখা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহনশীলতা, শৃঙ্খলা ও নিরাপদ আবাসিক পরিবেশের পরিপন্থি। সংগঠনটি মনে করে, এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থি এবং এটি দ্রুত প্রতিরোধ করা জরুরি।
সংগঠনটি তিনটি দাবি জানিয়েছে— (১) ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, (২) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং (৩) হলে রাজনৈতিক পরিচয়ে ভয়ভীতি ও সিনিয়র-জুনিয়র বৈষম্যমূলক আচরণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ন্যায্য ও দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে তারা আশাবাদী। সংগঠনটি প্রশাসনকে অনুরোধ জানায়, যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উদাহরণযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।