নিজস্ব প্রতিনিধি।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উপকূল রক্ষা বাঁধ ছিদ্র করে সেচের পাইপ স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের পক্ষে এমন অনিয়মের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন গ্রামগুলো। জোয়ারের সময় বাঁধের ওই অংশ দিয়ে নোনা পানি প্রবেশের আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন ধরে মরাগাং নদীর পাড়ে অবস্থিত উপকূল রক্ষা বাঁধের অন্তত তিনটি স্থানে মাটি কেটে প্লাস্টিক পাইপ বসানো হয়েছে। এসব পাইপ দিয়ে চিংড়ি ঘেরে পানি তোলা হলেও বাঁধের স্থায়িত্ব মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিংড়ি ঘের পরিচালনার জন্য স্থানীয় তপন গাইন শুক্রবার রাতে পাঁচ নং পোল্ডারের আওতাধীন উক্ত বাঁধে তিনটি পাইপ স্থাপন করে মরাগাং নদী থেকে লবণ পানি তোলা শুরু করেছে।
এর আগে উপকূল রক্ষা বাঁধ থেকে অননুমোদিত পাইপ অপসারণে অভিযানের সময় প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে একই স্থান হতে বড় বড় চারটি পাইপ সরিয়ে দেয়া হয়। এদিকে নতুন করে আবার উপকূল রক্ষা বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ স্থাপনের ফলে স্থানীয়রা পুনরায় ভাঙন আতংকে পড়ার কথা জানিযেছে। তাদের দাবি বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চলমান নজরুল ইসলাম প্রকল্পে ক্ষতি হচ্ছে-দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেছেন। সেই রিটকে পুঁজি করে তপন গাইনের মত অনেকে উপকূল রক্ষা বাঁধ কেটে ও ছিদ্র করে পাইপ বসানোর পায়তারা চালাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব পাইপ অপসারিত না হলে সামনের বর্ষা মৌসুমে দুর্যোগ প্রবণ এলাকাটিতে পুনরায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেবে।

এদিকে নুতন করে পাইপ স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পাউবো সাব-ডিভিশন-২ এর উক্ত পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা জানান বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টায় তারা প্রায় ১০ সপ্তাহ আগে উপকূল রক্ষা বাঁধে স্থাপনকৃত যাবতীয় পাইপ ও কল অপসারণে অভিযান শুরু করে। প্রায় ৭০ ভাগ পাইপ অপসারণের এক পর্যায়ে বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনার বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট করে। পরবর্তীতে আদালত পাইপ অপসারনের উপর এক মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ‘আগামী ৫ ডিসেম্বর উক্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ডিসি স্যারের নির্দেশে তারা পাইপ অপসারণ বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু রিট হওয়ার পর এখন আগের তুলনায় ঢের বেশী অবৈধ পাইপ স্থাপন করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশনার কারণে তারা নতুন করে পাইপ স্থাপনকারীদের ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের সাথে খারাপ আচারণ করা হয়েছে। এমনকি ইতিমধ্যে স্থাপনকৃত পাইপ অপসারিত করে এসে তাদের পাইপে হাত লাগানোর জন্য হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। এমতাবস্থায় নিজেরা অসহায় অবস্থায় রয়েছেন দাবি করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা আরও জানান এভাবে যত্রতত্র পাইপ স্থাপনের কারণে বাঁধ মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে বুঝেও তারা কিছুই করতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি পাউবো উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন বলেও নিশ্চিত করেন।
রিটকারী নজরুল ইসলাম জানান মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল বাঁধের উপর দিয়ে (১৪ফুট টপ) দু’পাশে পাইপ লাগিয়ে পানি উঠানোর ব্যাপারে। সেক্ষেত্রে বাঁধের মধ্য ভাগ ছিদ্র করে কিংবা অন্য কোন উপায়ে বাঁধের ক্ষতি করে পানি প্রবেশের সুযোগ নেই। যে কারণে বিজ্ঞ আদালত রুল জারির পাশাপাশি বাঁধের উপর দিয়ে স্থাপনকৃত পাইপ অপসারণে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কোন ব্যক্তি বাঁধ কেটে বা ছিদ্র করে পাইপ স্থাপন করলে দায় তাকেই নিতে হবে।
এদিকে পাইপ স্থাপনকারী তপন গাইন দাবি করেন, অন্যদের স্থাপন করা পাইপ সরানো হলে তিনি নিজে পাইপ সরিয়ে নেবেন। ইতিপুর্বে পাউবো’র নির্দেশনা পেয়ে তিনি পাইপ সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু পাশের কিছু পাইপ অপসারিত না হওয়ায় দু’দিন আগে তিনি পাইপ স্থাপন করেছেন।
অন্যদিকে পরিবেশবিদদের মতে, উপকূলীয় এলাকায় এমনভাবে বাঁধের স্থাপনা নষ্ট করা সরাসরি দুর্যোগ ঝুঁকি বাড়ায়। শ্যামনগর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম হওয়ায় এখানে সামান্য দুর্বলতাও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। তারা দ্রুত পাইপ অপসারণ এবং স্থায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থার দাবি জানান।