দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি।
বন্যা পরবর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গণের তীব্রতা বাড়ার ফলে আতঙ্কিত উপজেলার বেশ কিছু এলাকার নদীপাড়ের মানুষ। বন্যার পানি কমার কারণে এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে পদ্মায় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। তবে ইতোমধ্যে দৌলতপুর উপজেলার নদীর চরাঞ্চল ও নিন্মাঞ্চল (মরিচা ও চিলমারী ইউনিয়ন) এর বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, বসতবাড়ী,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্থাপনা ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে নদী রক্ষা বাঁধ ও ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এসব স্থাপনার সাথে সাথে কয়েকটি গ্রাম বিলীনের
শঙ্কায় নদীভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ভুরকা-হাটখোলা
থেকে কোলদিয়াড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা,এবং ভারত সীমান্ত সংলগ্ন চিলমারী ইউনিয়নের বাংলাবাজার, আতারপাড়া ও উদয়নগর এবং ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াহ এলাকাজুড়ে নদীভাঙন বেড়েই চলেছে। গত দেড় মাসে মরিচা ও চিলমারী ইউনিয়নের উদয়নগর বিজিবি ক্যাম্পসহ ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন গ্রামের শত শত বিঘা আবাদি ও ৩ ফসলি জমি, বাগান, বেশকিছু বাড়ি-ঘরসহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকেই।
এছাড়া ভারত থেকে আসা ৫০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং ৫০০ মিটার দূরের রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে। হুমকির মুখে নদী ভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভুরকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় কান্দিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদ, জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং জুনিয়াদহ বাজার হুমকির মুখে রয়েছে।
ভাঙন কবলিত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে প্রতি বছরই প্লাবিত হয় চরের কৃষিজমি ও নদীর দুইপাশের নিম্নাঞ্চল। দেড় মাস আগেও বন্যার পানি থই থই করা এলাকাগুলোতে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
নদীপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত বছর এক কিলোমিটার এলাকায় বালিভর্তি জিও ব্যাগ ও
টিউব ফেলে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু না হলেও কয়েকটি
এলাকা কোনোমতে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। এর মধ্যে ভুরকাপাড়ায় নদীর কিছু অংশে জিও
ব্যাগের বাঁধ থাকলেও মরিচা ইউনিয়নের বিশাল এলাকা এখনও অরক্ষিত।
নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এসব এলাকার বসত বাড়িসহ ফসলি জমি। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন
কৃষকসহ অসংখ্য গ্রামবাসী।
কোলদিয়াড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেন জানান, তীব্র ভাঙনে ফসলের মাঠ
পার হয়ে নদী এখন মহিষকুন্ডি-রায়টা বাঁধের নিচে চলে এসেছে। প্রতিদিন ব্যাপকভাবে নদী ভাঙছে।
একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এলাকাকে রক্ষা করতে হবে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ দেওয়া দরকার। তা না হলে কয়েকটি
গ্রামের বাড়ি-ঘরসহ সবকিছুই নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভীন জানান, বন্যা পরবর্তী নদী ভাঙ্গণে ফলে কৃষি জমি বিলীন
হলে কৃষিকাজ ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ফলে কৃষি উৎপাদন কমতে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে
বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, নদীভাঙন এলাকা
পরিদর্শন করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভাঙন রোধে স্থায়ী ও অস্থায়ী- দু’ধরনের পদক্ষেপের
প্রস্তাবনা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আসলে দ্রুতই
পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।