বাংলাদেশে পেঁপে একটি খুবই জনপ্রিয় ফল ও সবজি । একসময় পেঁপে শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিজ বাড়ির আঙিনায় রোপণ করা হলেও বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যানে এখন বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে । বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর গ্রামের ইকরাম বিশ্বাস ব্যাপক লাভবান হওয়ায় তার দেখাদেখি অনেকেই ঝুঁকছেন পেঁপে চাষে।
জমিতে সাঁরি সাঁরি করে লাগানো পেঁপে গাছে ধরে আছে অসংখ্য পেঁপে । ২ বছর ধরে গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষই হচ্ছে না। বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর গ্রামের ইকরাম বিশ্বাসের পেঁপে বাগানে দেশী জাতের পেঁপে চাষ করা হয়েছ। তার ১ একর জমির পেঁপে বাগান থেকে প্রতি ১৫ দিনে দেড়’শ মন পেঁপে তোলা হয় । তার এই বাগানের মধ্যে ৬০ শতাংশ জমিতে গত বছরের গাছ এবং ৪০ শতাংশ জমিতে এবছরের লাগানো গাছে পেঁপে ধরছে।
ইকরাম বিশ্বাসের সাথে কথা হয় তার পেঁপে বাগানে। তিনি জানান, ফাল্গুন মাসে পেঁপের চারা রোপন করা হয়ে থাকে। প্রতিবার পেঁপে তোলার পরে গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। এতে তার খরচ হয় চার হাজার টাকা । এ পর্যন্ত তিনি ৮ লক্ষাধিক টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন ।পেঁপে বিক্রি করে তার আনুমানিক খরচ বাদ দিয়ে চার লক্ষাধিক টাকা মুনাফা পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে পেঁপের বাজার মূল্য কম থাকায় আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন না। চার শ’ টাকা করে মন দরে বিক্রি করা পেঁপের বর্তমান বাজার মূল্য দুই’শ টাকা। চারশ’ টাকা মন দরে বিক্রির সময় বেশ লাভ হলেও এখন আর তেমন টি হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে।
খানপুর গ্রামের আখতার হোসেন জানান, ইকরাম,সালামসহ অন্যদের দেখাদেখি তিনিও মাঠে পেঁপে চাষ শুরু করে সফল হয়েছেন । পেঁপে চাষ দেখে আমাদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তাদের সাফল্য দেখে আমার মতো গ্রামের অনেকেই এখন পেঁপে চাষ করছে।
একই গ্রামের ইলিয়াস আলী বলেন, ৩ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। চাহিদা ভালো থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে পেঁপে কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।
একই গ্রামের চাষি আব্দুস সালাম পেঁপে চাষ করেছেন সাত বিঘা জমিতে। বিগত বছর আম্ফান ঝড়ে মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়া সালাম নতুন উদ্যমে পেঁপে চাষ করে ঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। তিনি সফল হয়েছেন পেঁপে চাষ করে। ঝড়ের ক্ষত শুকিয়ে নতুন পথ্র যাত্রী আবুস সালাম তার পেঁপে বাগান থেকে প্রতিদনই পেঁপে তুলে বাজারজাত করেন। প্রতিদিন তিনি প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ মন পেঁপে গাছ থেকে তোলেন । পাইকার ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই পেঁপে কিনে নিয়ে যান । বর্তমানে পেঁপে দুই’শ টাকা মন দরে ক্ষেত থেকেই পাইকারি বিক্রি করছেন । তিনি এপর্যন্ত ২০ – ২৫ লাখটাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। এতে তিনি বিক্রির প্রায় অর্ধেক টাকা লাভবান হয়েছেন বলে জানান।
ইকরাম , সালামই শুধু নয় পেঁপে চাষ করছেন ওই গ্রামের আব্দুল কাদের ,খালিদ বিন ইউছুপ,,আখতার হোসেন ,ইলিয়াস আলী,আলতাফ হোসেন ,জাকির হোসেন,মোশারেফ মোল্যাসহ অনেকে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় পেঁপে বাজারজাত করতে চাষিদের অনেক দূর্ভোগ বলে তারা জানান।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহোল আমিন বলেন, পেঁপে অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল ।এটি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় ।সারা দেশেই পেঁপে কমবেশি চাষ হয়ে থাকে। ফলটি সবজি ও পাকা হিসেবে খাওয়া যায়। বর্তমানে বাঘারপাড়া উপজেলায় পেঁপে চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।