1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
ভবদহবাসীর প্রশ্ন আর কতকাল জলবদ্ধতার কারণে খাদ্য, বস্ত্র আর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবো আমরা ? - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ভবদহবাসীর প্রশ্ন আর কতকাল জলবদ্ধতার কারণে খাদ্য, বস্ত্র আর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবো আমরা ?

  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৪৯৪ জন খবরটি পড়েছেন

যশোরের দু:খ হিসেবে খ্যাত, অভিশপ্ত ভবদহে বৃষ্টির মৌসুম আসলেই চারিদিকে থৈ থৈ করে পানি। আর এই পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসা বঞ্চিতসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

শনিবার সকালে সরেজমিনে জলাবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশেবপুর উপজেলার মুক্তেশ্বরী, টেকা, হরি, আপারভদ্র, হরিহর ও বুড়িভদ্র নদী দিয়ে বেষ্টিত ভবদহের জলাবদ্ধ অঞ্চল।

এসব নদী ও খাল দিয়ে ভবদহের পানি নিস্কাষণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে টেকা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২১ ভোল্টের স্লুইস গেইট রয়েছে দত্তগাতী-দামুখালী এলাকায়। ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ ধান রোপণ, মাছ চাষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত ।

ভবদহের দূর্ভোগের বিষয় জানতে চাইলে পাঁচবাড়ি মুক্তেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ সমারেশ সরকার জানান, ভবদহের জলবদ্ধতার কারণে আমাদের মানুষের যে অর্থনৈতিক অবস্থা এটা একেবারে শূণ্যের কোটায় নেমে গেছে, কারণ এই এলাকার মানুষ কৃষিনির্ভর হওয়ায় এখানকার কৃষি জমিতে দীর্ঘ কয়েক বছর কোন চাষাবাদ হয়না।

এই এলাকাটি ইরিধানের চাষাবাদের ওপর নির্ভর ছিল। কিন্তু আজ ৩-৪ বছর ধরে ইরি ধান হয়না, কারণ এ অঞ্চলে বৈশাখ মাসেও ৩-৪ফুট পানি জমে থাকে। এ কারণে এখানকার মানুষ বিকল্প পথ হিসেবে মাছচাষ শুরু করেছিল কিন্তু জলাবদ্ধতায় ঘের ভেসে যাওয়ায় ঘেরের লাখ লাখ টাকার মাছ জলাশয়ে উন্মুক্ত হয়ে যায়।

ছবি -ডূমুরতলা এলাকা

তাছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, প্রতিটি বিদ্যালয়ের মাঠে এখনও পর্যন্ত হাটু পানি জমে আছে। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধ থাকায় জমে থাকা পানি দূষিত হয়ে মানুষের নানা ধরণেল চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে।

এখনও দেখা যায়, ডুমুরতলা এলাকায় এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে হলে মিনি সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া বাড়ি থেকে বাজার-ঘাটে আসা যাওয়া করতে হলে ছোটখাটো ডোবা নালা পার হতে ডোঙ্গা লাগে। জলাবদ্ধতার শিকার এই চরম দূর্ভোগ দেখার কেউ নেই।

ডুমুরতলা এলাকার বাসিন্দা গোপাল সরকার জানান, ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৫সাল পর্যন্ত বছরে একবার ইরি ধানের চাষাবাদ করতাম কিন্তু গত ৪-৫বছর কোন কিছইু চাষ করা যায় নি। তাই এখন আমি নিরুপায় হয়ে মাছ, ডিম ও শাপলা বিক্রি করে কোনরকমে সংসার চালাচ্ছি।

অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রফুল্ল বিশ্বাস জানান, প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে নৌকা বাদে স্কুলে শিক্ষকদের আসার কোন উপায় থাকে না। এই জলাবদ্ধতার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়ার কারণে তাদের পড়াশুনায় ভালো ফলাফলে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই ঝরে পড়ছে।

ডুমুরতলা এলাকায় নৌকায় করে পারাপার

জানাগেছে, জলাবদ্ধ এলাকার নারী-পুরুষ কেউ মারা গেলে তাদের অন্যত্র দাফন বা দাহ করতে হয়। ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে এলাকাবাসী অনেকবার মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে টিআরএম প্রকল্প চালুর দাবি জানালেও কোন ভালো ফল বয়ে আনে নি বা প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

ভুক্তভোগী অনেকেই জানান, ভবদহে এমন দুরাবস্থা চলতে থাকলে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে বাপদাদার পৈত্রিক ভিটা-মাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। জলাবদ্ধতায় ওই অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকের শরীরে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা ধরণের চর্মরোগ, চাষাবাদ না হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরে দেখা দিচ্ছে অর্থাভাব এবং ছাত্রছাত্রীরা ঝরে পড়ছে প্রতিনিয়ত।

অভিজ্ঞমহল মনে করছেন, বাংলাদেশে সংবিধানে রচিত মৌলিক অধিকারের মুল বিষয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার এসব গুলো বিষয় থেকেই বঞ্চিত হতে চলেছেন এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। ভুক্তভোগীরা অপেক্ষা করছেন, কবে মিলবে জলাবদ্ধতার হাত থেকে তাদের রেহাই। আর কখন থেকে শুরু হবে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews