।। লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল ।।
বাঘারপাড়ার একজন মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রউফ খাঁন। তিনি শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নয়, সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
যশোর জেলার বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়নের পাঠানপাইকপাড়া গ্রামে মোঃ আব্দুর রউফ খাঁনের জন্ম। পিতা মৃত এরফান আলী খাঁন, মাতা মৃত তাহেরুন নেছা। ১৯৫৫ সালের ০৫ ডিসেম্বর তার জন্ম। ৭ ভাই ২ বোনের মধ্যে সে সবার বড়। মোঃ আব্দুর রউফ খাঁনের বয়স যখন ৭ বছর তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর পরবর্তীতে তার বাবা ২য় বিবাহ করেন। তিনি তাঁর ১ম মায়ের সন্তান।
দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি যোগ দেন। ছোট বেলা থেকেই সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িত থাকায় দেশ স্বাধীন হবার পর পরই যাত্রা দলে জড়িয়ে পড়েন। বছর দেড়েক পর যাত্রা দল থেকে ফিরে ১৯৭৩ সালে এসএস সি পরীক্ষা দিয়ে ২য় বিভাগে উত্তীর্ন হন। এরপর দুর সম্পর্কের এক আত্মীয় খুলনা সিটি কলেজে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলেও সেখান থেকে ফিরে এসে যশোর হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। দীর্ঘ ৪ বছর পর বিএইচএমএস ডিগ্রী লাভ করে গ্রামে ফিরে দুঃখী মানুষের সেবায় নিয়োজিত হন।
এ সময় তিনি পুনরায় নাট্যাভিনয়ে মনোনিবেশ করেন। পিতার ইচ্ছায় ঐ সময় যশোর শহরের পুরাতন কসবার মোঃ আকবর আলী খানের বড় মেয়ে মিসেস খালেদা খানের সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে হয়। এর পরে জীবনের বেকারত্ব দুর করার জন্য চাকুরীর আশায় ঢাকায় যান।
কিন্তু সেখানেও কোনো চাকুরী না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিজ গ্রামের মোঃ ওলিয়ারের সাথে পরামর্শ করে রাজমিস্ত্রির জোগালের কাজে বাড্ডা গ্রামে ২৫ টাকা হাজিরায় যোগ দেন। এই কাজের কিছু দিন পরে তিনি ব্রিটিশ হাইকশিনারের বাসায় নাইট গার্ডের চাকরি পান। এই চাকুরী কিছু দিন করার পর বৃটিশ হাইকমিশনার এর বাসার বয়ের চাকুরীর ব্যবস্থা হয়।
বছর খানেক পর ছুটিতে যশোর শহরে শশুর বাড়িতে আসলে শশুর বললেন তোমাকে আর ঢাকায় যেতে হবে না। তিনি একটা দরখাস্ত নিয়ে এসে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তিন দিন পর বলেন তোমার চাকরী হয়ে গেছে। কাল অফিসে গিয়ে বড় সাহেবের নিকট থেকে চাকুরীর নিয়োগ পত্র নিয়ে ঝিনাইদহ গনপূর্ত অফিসে যোগদান করবা। তার এই চাকুরী পাওয়ার একমাত্র কারন ছিল শশুরের সাথে বড় সাহেবের খুব ভাল সম্পর্ক ।
সেই থেকে যশোর গনপূর্ত বিভাগে চাকুরী করা আর লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্য সাধনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালিয়েছেন। সামাজিক কর্মকান্ডেও মানুষের পাশে থেকে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কৃষক সংগঠন গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের পরিচালনা কমিটিতে দির্ঘদিন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে থেকে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়নে কাজ করেছেন।
সবকিছুর মধ্য দিয়েও তিনি লেখালেখি,সাহিত্য-সাধনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। নিজ উদ্যোগে তিনটি বই প্রকাশ করেছেন। বইগুলো হচ্ছে – ভেজা তুষের অনল,শেষ ঠিকানা এবং আমার চোখে । এছাড়া ৮ খানা অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- আমি ও আমার মুক্তিযুদ্ধ, স্রোতে ভাষা জীবন (নাটক), অপুর্ন বাসনা (নাটক), প্রেমা হত (নাটক), চক্রান্ত(নাটক) , মতি পাগলা এখন স্বাধীন (নাটিকা), বিল্ল মঙ্গল চিন্তামনি (গীতি নাট্য), ও সুর ধ্বনি ( ৪৮০টি গানের সমন্বয়)।
দেশ স্বাধীনের আগে লেখকের লেখা অনেক নাটকের পান্ডুলিপি যেমনঃ মেঘে ঢাকা তারা, চরিত্রহীন, হৃদয়ের কান্নাসহ আরো অনেক নাটকের পান্ডুলিপি নষ্ট হয়ে গেছে। দাম্পত্য জীবনে আব্দুর রউফ খাঁন ২ সন্তানের জনক। ছেলে খায়রুল হাসান খাঁন হীরা ও মেয়ে রুকসানা পারভীন মিরা।