বাঘারপাড়া প্রতিনিধি।।
নারীর ঝরে পড়া প্রেসিং করা চুল দিয়ে ক্যাপ ও খোঁপা তৈরির কাজ করে আজ অনেকেই স্বাবলম্বী। গ্রাম-গঞ্জে ছুপড়ীঘরে বসে তাদের উৎপাদিত সেই পণ্য চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা হয়ে চীন দেশে। সেখানে সেই খোঁপা করা চুল্ গুলো আরোও উন্নত মেশিনে প্রসেসিং করে চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে।
বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর ,নারিকেলবাড়িয়া , শ্রীরামপুর, আগড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে নারীর ঝরে পড়া চুল দিয়ে দিয়ে ক্যাপ ও বাহারী খোঁপাসহ নানা উপকরণ তৈরীর ছোট ছোট কারখানা গড়ে উঠেছে। কোন ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই এই ব্যবসা শিল্পের পর্যায়ে পৌছে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,কারখানায় বসে ছেলে-মেয়েরা চুল দিয়ে বিন্ন ধরনের ক্যাপ ও খোঁপা তৈরী করছেন। প্রায় ৫ শ মানুষ চুল শিল্পে কাজ করে পরিবারে্র জন্য বাড়তি রোজগার করছেন। করোনার কারনে স্কুলে চাপ কম থাকায় স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা এ কাজে অংশ নিয়েছে। এছারা সংসারের অভাব কমাতে বাবা-মাকে বাড়তি একটু আর্থিক সহযোগীতা করতেও অনেকে এ কাজে যোগ দিয়েছে।
খানপুর গ্রামের কারখানা পরিচালক বিকাশ কুমার রজক জানান, গ্রাম অঞ্চলের ফেরীওয়ালারা বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের মাথা থেকে ঝরে পড়া চুল সংরহ করেন। তারা ৫-৬ হাজার টাকা কেজি দরে কিনে এনে ৭-৮ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন পাইকারী ক্রেতাদের কাছে। এসব চুল কারখানায় বসে পরিষ্কার করার পর বিক্রী হয় চায়না বায়ারদের কাছে ।
তিনি জানান, চুল ব্যবসায়ী চুয়াডাঙ্গার আবু বক্কার ঢাকা থেকে চায়না কোম্পানি মাধোমে চুলের ক্যাঁপ, খোঁপা তৈরির উপকরণসহ প্রসেসিং হয়ে আসা চুল ক্রয় করে এনে আমাদের কাছে সরবরাহ করেন। এখানে সরবরাহ করা চুল দিয়ে খোঁপা, ক্যাঁপ ও পরচুলা তৈরি করার পর ঢাকার উত্তরা ও বারিধারাসহ অন্যান্য এলাকার চীনা কোম্পানীর কাছে ১৫-২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
বিকাশ রজক আরোও জানান, কিছুদিন আগে প্রতিতা পণ্যের তৈরী শেষে আমাদের কর্মীদের ৫ শ টাকা করে মজুরী দিলেও বর্তমানে বাজার নিম্নমুখীর কথা বলে প্রতিটা সাড়ে ৩ শ টাকা করে দিচ্ছেন। এতে করে কর্মী এবং কাজ দু’টোই কমে গেছে। আগে আমার কারখানায় যেখানে প্রতিমাসে তৈরি হতো ২ শ ৫০ থেকে ৩ শ পিছে সেখানে বর্তমানে তৈরি হচ্ছে ১ শ থেকে ১ শ ৫০ পিছ। উৎপাদন কমে যাওয়ায় তিনি আগে প্রতি পিছ ৫০ টাকা হিসেবে সাড়ে ১২-১৫ হাজার টাকা পেতেন, বর্তমানে ৫-সাড়ে ৭ হাজার টাকা আয় করছেন।
সুমাইয়া(৩৫) নামে এক গৃহবধু জানান,গ্রামের অনেক মেয়ে-ছেলে চুলের কাজ করে সংসার চালায়। তাদের দেখাদেখি তিনিও চুলের কাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি এখান থেকে ৫-৬ হাজার টাকা আয় করেন। স্কুল পড়ুয়া অর্পিতা জানান,অভাবের সংসার তাই স্কুলে লেখা-পড়ার চাঁপ কম থাকায় অবসরে চুলের কাজ করি। করোনার সময় স্কুল ছুটি থাকায় অনেক কাজ করেছি। পেয়েছি ভালো টাকা, তবে এখন পারিশ্রমিক যেমন কম,এ গেছে তেমনি কাজের সময় ও কমে গেছে। ফলে আয় এখন কমে গেছে।
১৪-১৫ বছর বয়সের রিফাত ও সাকিব নামের দুই বালককে ও কারখানায় চুলের কাজ করতে দেখা গেল।
নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের কারখানার মালিক মেহেদী মাসুদ বলেন,এ কাজে আমাদের অনেক টাকা-পয়সা লাগে। কিন্তু স্বল্প পূঁজি নিয়ে ব্যবসা করাকঠিন।সরকার যদি আমাদের বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে ঋণ দিতো তাহলে আমরা ভালোভাবে আধুনিক মেশিন বসিয়ে চুলের ব্যবসা করতে পারতাম।
সীমা,মিতা ও মিতু নামের স্কুল পড়ুয়ারা বলেন, আমরা যা রোজগার করি তাতে হাত খরচ সহ সংসারের অনেক কাজে লাগে। পুরুষ মানুষের কাছে হাত পাতা লাগেনা।