ডেস্ক রিপোর্ট।।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামে সেচের পানি না পেয়ে বিষপানে দুই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য তদন্ত কমিটি কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে ক্ষোভে ও অভিমানে বিষ পান করে মারা যাওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষক অভিনাথ মার্ডির (৩০) পর মারা গেলেন তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডিও (২৭)। গত ২৪ মার্চ রাত ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবি মার্ডি মারা যান।
নিহতরা হচ্ছেন- অভিনাথ মার্ডি (৩০) ও রবি মার্ডি (২৭) ।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জুবাইর হোসেন বাবলুকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, বিএডিসির (নাটোর) নির্বাহী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) সাজ্জাদ হোসেন এবং বিএমডিএর (নওগাঁ) নির্বাহী প্রকৌশলী সমশের আলী।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০ টা হতে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার ঈশ্বরীপুর মাঠে ধানের জমিতে সেচ দেয়ার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ডিপ অপারেটর শাখাওয়াতের কাছে ১২ দিন ধরে ঘুরেও সেচের পানি পাননি অভিনাথ। এদিকে, পানি শুকিয়ে ধানী জমি বিবর্ণ হতে থাকে। সবশেষ বুধবার আবারো ডিপ অপারেটরের কাছে সেচের পানির জন্য যান অভিনাথ ও রবি। কিন্তু সিরিয়াল না পেয়ে তারা এক সঙ্গে বিষপান করেন।
এ ঘটনায় ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেচ নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছে নিহত কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমরম। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে এ মামলা করা হয়।
অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেনকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম।
নিহত কৃষক অভিনাথের চাচাতো ভাই বাপ্পি মার্ডি জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব আমার সাথে সেদিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি সেদিন ডিপের পশ্চিম পাশ্ব দিয়ে আসছিলাম। পথিমধ্যে ডিপের ড্রাইভার শাখাওয়াত আমাকে দেখে গাড়ী থামাতে বলে একে (অভিনাথকে) নিয়ে যা। বিষ খাইছে নাকি । আমার খুব তাড়া থাকায় নিতে চাইনি । যেহেতু জমির আলু গাড়ীতে নেওয়ার তাড়া ছিলো আমার। ড্রাইভার শাখাওয়াত আরো বলে আরে না না নিয়ে চলো। তখন আমি অভিনাথ কে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে তোর । তখন অভিনাথ বলে আমি বিষ খাইছি শাখাওয়া। কি কারনে বিষ খাইছি জানতে চাইলে বলে মনের দু:খে বিষ খাইছি।
তদন্ত কমিটি অভিনাতের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রনের সাথে কথা বলতে গেলে শোকে কাতর থাকায় তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলতে পারেনি। তবে নিহত অভিনাথের ভাবি পারবর্তি সরেনের সাথে কথা বললে সে জানান, গত ২৩ মার্চ (বুধবার) অভিনাথ বিষ খাইছে বলে আমরা জানতে পারি। পরে সে মারা যায়। ডিপের ড্রাইভার শাখাওয়াত ১২-১৪ দিন তাকে পানির জন্য ঘুরিছেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। জমির পানি না পেয়ে সে বিষ পান করেছে।
এছাড়াও তদন্ত কমিটি স্থানীয় কৃষক মহেশ্বর মুরমুর সাথে কথা বলেছেন। কৃষক মহেশ্বর মুরমু তদন্ত কমিটির কাছে জানান, তেলের মাথায় তেল ঢালে।আমরা পানি জন্য ঘুরে সিরিয়াল মতো জমিতে পানি পাই না। তবে কেউ ড্রাইভার শাখাওয়াতকে ফোন করে পানির কথা বললে তার জমিতে আগে পানি দেওয়া হয়ে যায়। এই মৌসুমেই আমারও জমির পানি শুকিয়ে গেলে ফাঁটল দেখা দিয়েছিলো বলে জানান। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব ( সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার তদন্তে এখনো মন্তব্য করার সময় হয়নি । বক্তব্য আমরা নিয়েছি, আরো শুনবো লিখবো। আমরা নিহতের বাসা গিয়েছি, ডিপ টিউবওয়েলের কাছে গিয়ে অন্যান্য কৃষকের সাথে কথা বলেছি বলে জানান।