অভয়নগর ( যশোর) প্রতিনিধি।
অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে তালতলার প্রভাবশালী আকরাম সরদার গং ও সাবেক কাউন্সিলর জাহানারা বেগম ২৬০শতক সরকারি খাস জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জবর দখলের বিষয়ে ওয়ার্ডবাসীরা ভূমি অফিসে লিখিত অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
সোমবার দুপুরে নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে ওয়ার্ডবাসীরা সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ওয়ার্ডবাসীর পক্ষে মো.আবু বায়েজীদ খান মিতুল। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, নওয়াপাড়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের তালতলার দূর্গাপুর মৌজায় খতিয়ান নাম্বার ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৩৭, ৩৯, ৪০ ও ৪১ দাগে ২৬০ শতাংশ খাস জমি রয়েছে। স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু প্রভাবশালী আকরাম সরদার গং ও সাবেক কাউন্সিলর জাহানারা বেগম অবৈধখাবে দখল করে সেখানে পাকা স্থাপনা, বালি ও পাথরের ব্যবসা, দুটি স’মিলসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে রেখেছেন। যে কারণে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। লাভবান হচ্ছেন ভূমিদস্যুচক্র। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এই ভুমিদস্যুরা অবৈধভাবে সরকারি খাস জমি দখলে নিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে বলে তাদের অভিযোগ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক সময় ওই
জমিতে বাজার বসতো। যা তালতলা হাট নামে পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনে ভূমিদস্যুচক্রের চক্রান্তে হাটের ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং জবরদখল করে তারা নিজেদের নামে বেনামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
এই চক্রের সঙ্গে তৎকালীন সময়ে সরকারি নায়েব ও আমিনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জড়িত ছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়। ওই একই মৌজায় ১০২ খতিয়ানে ২৩, ২৫ ও ৫৩ দাগের ৯৬ শতাংশ সরকারি খাস জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৬২ সালের রেকর্ড অনুযায়ী একের এক খতিয়ানে ৯৬ শতাংশ খাস জমি কীভাবে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে বলে প্রশ্ন তোলেন ওয়ার্ডবাসীরা। এছাড়াও একের এক খতিয়ান ২৯ দাগে ১২৪ শতাংশ জমি আকরাম সরদার গং বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আদেশ নামার মাধ্যমে জোরপূর্বক দখল করে খেয়ে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ভূমিদস্যু চক্র অধিক শক্তিশালী। যে কারণে বিভিন্ন দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করে একই সাথে প্রাচীন ঐতিহ্য তালতলা হাট পুনরায় তার নিজস্ব নিজের স্থান ফিরে পাবে সেই কামনা করেন। তালতলা হাট তার নিজের স্থান ফিরে পেলে সরকার ফিরে পাবে রাজস্ব উপকৃত হবে সাধারণ জনগণ ।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে সরকারি খাস জমি উদ্ধারের ব্যাপারে তালতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় আগামী ২০ তারিখে মানববন্ধন, নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ২৪ তারিখে স্মারকলিপি পেশ করবেন। এছাড়াও ২৬ তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি জমা ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম রেজা ফরাজী, মহিলা কাউন্সিলর রাশিদা বেগম লিপি, ফরাজী তৌহিদুর রহমান লিটন, মির্জা তমাল, ডাক্তার মোহাম্মদ লিটন, মোহাম্মদ জাকির, সরদার রাজিবুল ইসলাম, মোহাম্মদ হাবিব সরদার, মোহাম্মদ ডালিম সানা, মো. সাব্বির ফারাজী, আবিদুর রহমান, মো. মেহেদী হাসান প্রমুখ।
কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম রেজা ফরাজী বলেন, এলাকাবাসীরা মিলে আমরা সবাই এই সরকারি খাস জমি উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছি। অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে রেখেছে সাবেক কাউন্সিলর জাহানারা বেগম ও ভূমিদস্যু আকরাম গং। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর স্বার্থে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপরে অভিযুক্ত আকরাম সরদার বলেন, আমি সব জমি দখল করে রাখিনি। সরকারি জমি মুলত যার পাশে থাকে সে ভোগ দখল করে খায়। আবার সরকারের যখন কাজে লাগে তখন ছেড়ে দিতে হয়। আমি যেটুকু দখল করেছি । সে জমি টুকু মাপ দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে লাল পতাকা দিয়েছে। আমার স্থপনা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা করছি।
এ বিয়ষটি নিয়ে সাবেক কাউন্সিলর জাহানার বেগমের ফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। যে কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) থান্দার কামরুজ্জামান বলেন, আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে খাস জমির ব্যাপারে অবৈধ স্থাপনার মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছি। আমরা ওই জায়গা মাপ দিয়েছি। তাদেরকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমার দপ্তরের কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যেটা আদালতে মামলা চলমান সেটা আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।