মাও: মো: আনোয়ারুল ইসলাম। আগামী ৫ অক্টোবর আর্ন্তজাতিক শিক্ষক দিবস। এই শিরোনাম থেকে বুঝা যায়,পৃথিবীর সকল দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এবং সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষকতা পেশা নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পেশা। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, “আমাকে শিক্ষক হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে (দারেমী)”। তিনি আরো বলেন,“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয় (বুখারী)” ।
রাসূল (সা.) এর এ সমস্ত বাণী পড়ে আমরা শিক্ষক হতে উৎসাহিত হই। কিন্তু লেখাপড়া শেষ করে যখন এ পেশায় আত্মনিয়োগ করি,তখন মনে হয় এটা সবচেয়ে নিম্নমানের পেশা। কেননা এই পেশায় বেতন ভাতা উল্লেখ করার মত নয়। বিশেষ করে বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা খুবই সামান্য ।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস হচ্ছে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যাপী পালন করা হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।
একজন বি.এ(অনার্স)সহ এম.এ পাস করা শিক্ষার্থী যখন সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন,তখন তিনি যে বেতন-ভাতা পান তা মাত্র ১২,৭৫০/- (বার হাজার সাতশত পঞ্চাশটাকা)। যেটা তার অনান্য পেশায় নিয়োজিত বন্ধুবান্ধব, আত্বীয়-স্বজন এমনকি পরিবারে পিতা-মাতা,ভাই-বোনকেও বলতে লজ্জা বোধ করেন। এমন স্বল্প বেতন ভাতায় কিভাবে একজন শিক্ষক ছাত্র/ছাত্রীদের মনোযোগী হয়ে পাঠদান করাতে পারেন? এটা ভাববার বিষয়।
অথচ এ শিক্ষকের হাতে গড়া শিক্ষার্থীরা যখনঅনান্য পেশায় যোগদান করে তখন তারা তাদের শিক্ষকদের চেয়ে বেতন-ভাতা ঢের বেশি পায়। যেটা একজন শিক্ষকের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। তাই শিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখতে হলে বিশেষ ভাবে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা ব্যতিত কোন বিকল্প নেই। কেননা আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৯৫ ভাগেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি।
পাশাপাশি শিক্ষকদের মানমর্যাদা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের শাসনের ন্যূনতম সুযোগ শিক্ষকদের হাতে থাকা দরকার বর্তমানে শিক্ষার্থীরা হাজারো অপরাধ করলেও শিক্ষকদের শাসন করার সুযোগ থাকেনা। যাতে করে দিনদিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষকদের সম্মান করার প্রবণতা কমে আসছে। যদি দেশে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ আন্তরিকতার সাথে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দূরবস্থার কথা সরকারকে বুঝাতে চেষ্টা করেন,তাহলে শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন আসবে এবং শিক্ষার গুণগত মান যথাযথ ভাবে এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখক- উপাধ্যক্ষ,গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।