।।মোঃ মাসুম বিল্লাহ।। সার্টিফিকেট দিয়ে কখনো মেধার মূল্যায়ন করা যায় না। কেননা পৃথিবীতে এমন অনেক ব্যক্তি আছে যাদের কাছে হয়তো সার্টিফিকেট ছিল না কিন্তু মেধা ছিল এবং মেধার গুনে তারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠা যেমন করেছেন সাথে পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত। স্টিভ জব, মার্ক জাকারবার্গ, নিউটন, টমাস আলভা এডিসন তারা কেউ সার্টিফিকেটের জোরে বিখ্যাত হননি। আমাদের নজরুল ইসলাম এক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে।
মানুষ বিখ্যাত হয়েছেন তার প্রচেষ্টার ফলে। অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাজা জর্জ বুশ ও মাড়সার গল্প। আর এরকম সফলতার পিছনে পরিবার , সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশ বড় নিয়ামক। কথায় বলে আগুনকে ছাই দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না তেমনি প্রতিভাও উপর্যুক্ত পরিবেশ পেলে বিকশিত হবে।
আমার দেখা তেমন একটি ছেলে রায়হান। জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বানিয়ারী গ্রামে। ৭নং দক্ষিণ বানিয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার হাতে খড়ি। অতপর দীঘিরজান স্কুল এন্ড কলেজ, পিরোজপুর থেকে মাধ্যমিক ও ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, জাহানাবাদ সেনানিবাস, খুলনা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে করে ভর্তি হন ঢাকার প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
স্কুল কলেজের পরিসরে যারা মেধা বিকাশের পরিবেশ ক্ষীণ হওয়ায় যারা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাননি। কিন্তু পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বৃহৎ পরিসরে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরেন সুচারুভাবে। তেমনি এক প্রতিভার নাম আবু রায়হান। কলেজে পড়াকালীন হ্যাংলা পাতলা সদা হাসি মাখা মুখ খুবই অসাধারণ সাদাসিধে গোছের শিক্ষার্থী হিসাবে পরিচিত। তখন তার পরিচয় দেওয়ার মতো কোন পরিচিত গড়ে উঠেনি। লাজুক এই ছেলেটির সাদামাটা জীবনে এমনকিছু ছিল না যা তার সরলতাকে অতিক্রম করে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেবে। মোটামুটি মধ্যম গোছের শিক্ষার্থী বলতে যা বোঝায় তার সব কিছু ধারণ করে রায়হান।
কলেজের বার্ষিক ডিসপ্লেতে অংশগ্রহণ তার গুণের মাধুর্যতার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর। কলেজ ম্যাগাজিনে লেখালেখি তা তো সবাই করে সোখানে ও ব্যতিক্রম কিছু নাই রায়হানের। ফুটবল খেলায় ছিল তার দক্ষতা।যশোর ক্যান্টনমেন্টে জাহানাবাদের হয়ে খেলে অনবদ্য স্বকৃীতি পেয়েছেন।
রায়হানের স্কুল জীবনও অজানা স্বপ্নের মতো। কলেজ লাইফের ২টা বছর তার সাথে আমার স্বল্প পরিচয়। ঠিকঠাক ভাবে যেন তাকে চেনা মানুষের মাঝে অচেনা মানুষ। কিন্তু জীবনতো আর এক রকম চলে না।জীবন নানান উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।সদা হাস্য উজ্জ্বল সহজ সরল ছেলেটার ইউনিভার্সিটি লাইফে প্রবেশ পরবর্তী অসাধারণ পরিবর্তন বিস্মিত করে। অনেককে দেখেছি ইউনিভার্সিটি নামক বড় গন্ডিতে প্রবেশ করে বিকশিত হতে। যৌবনের প্রথম স্পর্শে নিজের সীমা অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে অনেককে দেখেছি গোল্লায় যেতে। স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার নামে নারী, প্রেম, মদ নামক বস্তুতে আধুনিক সেজে ধ্বংস হয়ে যেতে। কিন্তু রায়হান যে গ্রামের ছেলে। চোখে তার এক আকাশ স্বপ্ন, মনে তার অদম্য বাসনা কে রোধে তার দ্বার। আর একটা কথা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় দেখা যায় দেশের সবচেয়ে মেধাবীরা কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আর কম মেধাবীরা পড়ে ন্যাশনালে। এছাড়া আরো এক শ্রেণি আছে যারা বেছে নেয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এরা মেধাবী বা টাকাওলা দুই ধরণের হয়ে থাকে। তাদের মেধার স্বাক্ষর রায়হান। এসকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রায়হানের মতো প্রতিভাকে জন্ম দিয়েছে।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাফল্যের পিছনে তাদের অবদান মুক্তিযোদ্ধাদের মতো।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়ে যখন কারাগারে বন্দী তখনি দেশপ্রেমিক মানুষের নিজের জীবন বাজি রেখে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয় ৭১ এর বিজয়গাঁথা।
আর ২৪ এ ঢাবি, রাবি, জাবিসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুমূর্ষু হয়ে গেরিলা যোদ্ধার ভুমিকায় অবতীর্ণ ঠিক তখনি সম্মুখে এগিয়ে আসে প্রাইভেট ভার্সিটি। ব্রাক, প্রাইম, নর্থসাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্দানসহ দেশের শিক্ষার্থী নেমে আসে রাস্তায়। যাদেরকে ছাত্র রাজনীতির পেরেক মেরে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল তারা জাতির ক্রান্তিকালে পথপ্রদর্শক হয়ে আলোকবর্তিকা হাতে জীবন উৎসর্গ করে ঘুরিয়ে দেন আন্দোলনের মোড়। যার পরিনতি ৫ আগস্টের বিজয়। বিজয় পরবর্তী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ক্লাসে ফিরতে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে প্রাইভেট ভার্সিটি জাতির দুর্দিনে অর্পিত দায়িত্ব শেষ করে ফিরে গেছে পড়ার টেবিলে। এমনি এক লড়াকু সৈনিক রায়হান।
রায়হান প্রাইম ভার্সিটিতে আইনের ছাত্র। আইনের এই ছাত্রের মধ্যে আজ কিশোর সুলভ চঞ্চলতা নেই সেখানে দৃঢ়
মনোবলের বলিষ্ঠ আত্মপ্রকাশ জাতীয় পর্যায়ে বিতার্কিক হিসাবে আত্ম প্রকাশ। তার কথা বলার ধরণ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন মনে করে দেয় এ ছেলে একদিন দেশসেরা আইনজ্ঞ হবে। আইনে পড়েও বাংলা সাহিত্যের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে অবাক হই। সাহিত্য সকলে পড়তে পারে না। মানসিকতার উৎকর্ষ না থাকলে কেউ সাহিত্য পড়তে পারে না। পড়ার মধ্যে সে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং সে অসাধারণ ভাবে পঠিত সাহিত্য আলোচনা করে তা মুগ্ধ করে। বিশেষ চিত্তের অধিকারী সাহিত্য বুদ্ধার অন্যতম পছন্দ আহমেদ ছফা। আমাদের দেশে আহমেদ ছফার একনিষ্ঠ ভক্ত সলিমুল্লাহ খানের পথের সৈনিক রায়হান।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন সলিমুল্লাহ খানের প্রসঙ্গে বলেন, তিনি একটা জীবন্ত লাইব্রেরি, যতই শুনি আরো শোনার আগ্রহ বাড়ে। সেই লাইব্রেরি হলো রায়হানের পথের পাথেয়।সাহিত্যের এই পাঠ রায়হানকে সমৃদ্ধ করছে আর রায়হান সমৃদ্ধ করছে জাতিকে। সহজ সরল রায়হান অনবদ্য এক কৃর্তী গড়ার দাঁড় প্রান্তে। “বৃদ্ধাশ্রমকে না বলি স্লোগান” নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে চলছে ছেলেটি। তবে অবাক লাগে সাইকেলিং করে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ক্রস কান্ট্রি সফরের মাধ্যমে বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি দায়িত্ববোধের গুরুভার বহন করে চলেছে। পিতামাতা সন্তানের মাথার বটবৃক্ষ, সেই বৃক্ষ বয়সের সাথে নুয়ে পড়লে নাড়ি ছিঁড়া ধন হবে ভরসার কেন্দ্রস্থল। যে মানবতার বাণী প্রচার করছে রায়হান তা অজস্র মা বাবার বুকের প্রতিধ্বনি। রায়হানের মতো মানসিকতাকে ধারণ করতে পারলে আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম বলে কিছু থাকবে না। রায়হান যে বার্তা বহন করে তা পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানের বুকেজাগ্রত হোক। বিকোশিত হোক সুপ্ত রায়হান আলোকিত হোক ধরণী। রায়হানের সফলতা আমাদের আগামীর পথচলা। ভালো থাকুক রায়হান, বিলিয়ে দিক নিজেকে মানুষের কল্যাণে।