মোঃ মাসুম বিল্লাহ।। জুলাই ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন যাত্রা। এ যাত্রায় অসংখ্য ব্যক্তি পাওয়া যাবে যাদের নিয়ে চরম বিতর্ক আছে। তেমনি মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী সম্পর্কে এলার্জি থাকার বহু কারণ আছে সত্যি। কিন্তু এটা ভুলে গেলে হবে না জুলাই স্বাধীনতা যুদ্ধের নতুন অভ্যুদয়ের পিছনে তার মতো অসংখ্য এলার্জি থাকা মানুষের অবদান রয়েছে।
আপনারা যারা বিরোধিতা করছেন প্রত্যকে নিজের অবস্থান ও চিন্তা থেকে বিরোধিতা করছেন, যেটা সম্মানের। কিন্তু যারা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করছেন তারা দেশের ২০ কোটি মানুষের চিন্তা চেতনার জায়গা থেকে করতে হচ্ছে। আর এতো মানুষেকে একত্রে একটা প্লাটফর্মে নিয়ে আসা অসম্ভব প্রায়। সেখানে বড় দল বিএনপি ও জামায়াতের আদর্শের সাথে নাও মিলতে পারে। আপনারা দেখেছেন নতুন প্রজন্ম তাদের ভাবনার প্রতিফলন এসব বড় দলের মধ্যে ধারণ করতে পারেনি। বরং তারা জোনায়েদ সাকি, ভিপি নুর, ব্যারিস্টার ফুয়াদের চিন্তার সাথে সমন্বয় করতে পারে। বড় রাজনৈতিক দলের সাথে ৫৩ বছরের টানাপোড়েন সম্পর্কে তারা আজও আস্থা খুঁজে পাচ্ছে না। তার সাথে উঠতি প্রজন্ম নাহিদ, আসিফ ও এদের উত্তরসুরীরা আরো এক ধাপ এগিয়ে। তারা চায় রাজনৈতিক সহাবস্থান। এই জন্য তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে চাচ্ছে না আবার ইসলামি শাসনতন্ত্রের জিম্মাদারি জামায়াতকেও দিতে চায় না। তারা মানুষ হিসাবে মুসলাম কিন্তু কোন ধর্মীয় নীতির বাস্তবায়ন চায় না, চায় উদার নীতির প্রতিফলন।
মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ,খ্রিস্টান,ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি প্রত্যেককে এক কাতারে সামিল করতে চায়। তারা দেশটাকে জাপান, কানাডা, ফিনল্যান্ড, নি়উজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া,সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া বানাতে চায়। তাই বিএনপির কাছে মনে হতে পারে তাদের আদর্শের পরিপন্থী এবং জামায়াতের কাছেও মনে হতে পারে তাদের আদর্শের পরিপন্থী। আপনারা যারা রাজনৈতিক দলের লোক আপনারা ভেবে দেখেনতো, কোন ধরণের ব্যক্তিগত বা দলগত প্রত্যাশা ছাড়া শুধু মুক্তির জন্য আপনারা সকলে জুলাইয়ে রক্ত দিয়েছেন। সেখানে ক্ষমতায় যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল কী? আমার মনে হয়, না হবে সকলের উত্তর। কিন্তু জুলাই পরবর্তী সময়ে আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক আদর্শের বাস্তবায়ন আশা করছেন। আর না পেলে উপদেষ্টা পরিষদকে ব্যর্থ মনে করছেন।
প্রকৃত পক্ষে এই আন্দোলন দেশের প্রত্যেকটি দলের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সমস্যা হলো জুলাইয়ে সকলের লক্ষ্য ছিল একটা, আর তা হলো স্বৈরাচারের পতন। কিন্তু জুলাই পরবর্তী এখন প্রত্যেকের উদ্দেশ্য আলাদা। তাই এত ভিন্নমত, এত বিরোধিতা। তাহলে ভাবুনতো যারা উপদেষ্টা পরিষদে আছে তাদের কি প্রেশার যাচ্ছে। সাথে সারজিস, হাসনাতের মতো ছেলেদের আদর্শের সাথে এক হতে না পেরে খালেদ মহিউদ্দিনের মতো সাংবাদিকের মনঃকষ্টের স্বীকার হতে হচ্ছে। যদিও বিদেশের মাটিতে থেকে যত বড় কথা বলা যায় দেশের মাটিতে থেকে বলা বড় কঠিন।
দেশে শুধু কঠিন না বরং আপনি পারবেন না। পিনাকী দাদা,ইলিয়াস হোসেন, কনক সরোয়ার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সেখানে নাহিদ আসিফ চেষ্টা করছে দেশে থেকে। তারপরও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরোধিতা হয়। বিরোধিতার কারণও ঐ রাজনৈতিক দলের মতো। আর অল্প বয়সে এতো বড় পোস্টে বসা অনেকে মানতে পারছেন না। কেননা আমাদের অভ্যাস বয়স্ক আর দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষকে ঐসব স্থানে দেখা। দুর্নীতিগ্রস্থ এমপি, মন্ত্রীদের দেখতে দেখতে ঐসব স্থানের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে মানসিকভাবে তাদের মেনে নিয়েছি বহুদিন আগে। বরং সৎ ও অল্প বয়সী মানুষকে আমরা মানতে প্রস্তুত নই।
আমরা এখনো উদার হতে পারিনি, তাই ২৫বছরের স্নাতক শেষ করা ছেলেকে স্যার বলতে বাধে কিন্তু ফাইভ পাস করতে না পারা মমতাজকে ম্যাডাম বলতে গর্ব হয়। দলবাজীর কথা শুনে মনে শান্তি লাগা লোক সকলের মতকে শ্রদ্ধা করা বক্তব্য শোনার মতো শিক্ষিত বা বড় এখনো হতে পারেনি । আর তাদের সহপাঠীদের মধ্যে একটুতো জ্বলবে। কেননা সকলে একত্রে আন্দোলন করলো। কিন্তু তারা উপদেষ্টা পরিষদে। আর অন্যরা পড়ার
টেবিলে বা রাস্তায় অথবা জনচক্ষুর আড়ালে। যে আন্দোলনে সকলের অবদান সমান সেখানে নাহিদ, আসিফ বড় পদ পাবে এবং সারজিস, হাসনাত বড় বড় কথা বলবে আর কেউ হবে বঞ্চিত সেটা মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন। কিন্তু আন্দোলনের সবায় যদি উপদেষ্টা হতো তাহলে ভাবেনতো দেশ কোথায় যেতো।
জুলাই পূর্ববর্তী সময়ের সাথে জুলাই পরবর্তী সময়ে মানুষের চিন্তার ও মূল্যবোধের জগতে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। এই একদিন আগের চির শত্রু জুলাইয়ে এসে চির আপন হয়ে উঠেছে। তারা এখন আর জুলাই পূর্ববর্তী আদর্শকে লালন করে না বরং করতে পারছে না। তারা দেখে ফেলেছে সে আদর্শের ভণ্ডামি। এখন নতুন আদর্শ ও তার ধারককে পূর্ববর্তী সময়ের সংগঠিত অপরাধের কথা বলে দেশটার সংস্কারের পথে বাঁধা হওয়া অনুচিত। মনে করে দেখেনতো এখন যেভাবে আপনারা মত প্রকাশ করতে পারছেন বিগত ১৫ বছরে তার অবস্থান কোথায় ছিল? একটি আদর্শ এর বুলি আউড়িয়ে কিভাবে দেশটাক বিভাজন করা হয়েছে। অন্যের আদর্শের কথা চিন্তা করে দেখেনতো নিজের আদর্শের সাথে কতটুকু মেলে?
মঈন উ আহমেদ ও ফখরুদ্দীন আহমেদ এর যতো বিরোধিতা হোক না কেন অধিকাংশ জনগণ তাদের ২ বছরের
শাসন আমলকে বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ মনে করেন। আর সেখানে এই সরকার বড়ই অদক্ষ, তবু নিজের সধ্যে মধ্যে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে একটা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের। তাই আসুন ব্যক্তির বিরোধিতা না করে আমরা জুলাই আদর্শ পরিপন্থী কাজের বিরোধিতা করি। শুধু বিরোধিতা করে ক্ষান্ত না বরং এক্ষেত্রে জুলাই আদর্শ পরিপন্থী কোন ধরণের কাজ যেন না হয় তার জন্য সচেষ্ট থাকি। সবায় নেতা হতে না চেয়ে বরং দেশ গঠনে কর্মী হয়ে নেতাদের সফল করি। ইতিহাস হয়তো আসিফ, নাহিদের নাম বলবে। কিন্তু যদি আমরা পারি দক্ষ কর্মী ভূমিকা পালন করতে তবে ইতিহাস জাপানের নাগরিকের মতো সম্মানের জায়গায় আমাদের অধিষ্ঠিত করবে।
মোঃ মাসুম বিল্লাহ,প্রভাষক (বাংলা) ,গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদ্রাসা, অভয়নগর, যশোর।