প্রজনন মৌসুমের কারণে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। বুধবার ১লা জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জেলেদের কাঁকড়া ধরার পাস (অনুমতিপত্র) বন্ধ রাখা হয়েছে। ১লা জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনের পশ্চিম ও পূর্ব এই দুই বিভাগে এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।
বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কাঁকড়া ধরার জেলে হানিফ গাজী (৭০), ওয়াহেদ গাজী (৬৫) ও আবুল ঢালী (৭৫) জানান, গতকাল বিকেলে কাঁকড়া ধরার কয়েকটি নৌকা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে এসেছে। আর্থিকভাবে সচ্ছল কোনো লোক সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যান না। যাঁরা যায় তাঁরা প্রায় সবাই দরিদ্র। দুই মাস নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এই পরিবারগুলোর চলতে কষ্ট হয়। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন (বিশেষ শর্তে ঋণ) নিয়ে চলতে হয়। তাঁরা নিষেধজ্ঞার এই সময় সরকারি সহায়তার দাবি জানান।
শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর বাজারের কাঁকড়া ব্যবসায়ী রতন মন্ডলের দাবি, শ্যামনগর থেকে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ টাকার কাঁকড়া ঢাকায় পাঠানো হয়। আর বিদেশে রপ্তানি করা কাঁকড়ার অনেকটাই সুন্দরবন থেকে ধরা হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, এ দুই মাসে রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ এ সময় বেকার হয়ে পড়েন।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র আছে। এর মধ্যে কাঁকড়া ধরার নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র আছে ১ হাজার ৬০০টি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলে আছেন প্রায় ২৮ হাজার। যার অর্ধেকেরও বেশি কাঁকড়া ধরার জেলে।
বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) জিয়াউর রহমান বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁকড়া ডিম পাড়ে। এ ছাড়া কাঁকড়ার যখন ডিম হয়, তখন এদের ধরা খুবই সহজ। এরা ক্ষুধার্ত থাকে। এদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয়, তা খাওয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসে। যদি এ সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয়, তাহলে পরের বছর বেশি কাঁকড়া উৎপাদন সম্ভব। সুন্দরবনে টহল জোরদার করা হয়েছে।