নিজস্ব প্রতিনিধি। “ওঠো, জাগো এবং নিজের লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না। যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ নতুন জ্ঞান আহরণ করতে হবে। অভিজ্ঞতাই আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, তোমার দ্বারাই সব সম্ভব। জগতে এমন কিছু নেই যে তুমি পারবে না। এই সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাও। তুমি সফলতা পাবেই। লোকে তোমার নিন্দা করুক, বা প্রশংসা করুক, তোমার লক্ষ্যবস্তু তোমার কাছে থাকুক বা দূরে, আজই তোমার মৃত্যু হোক বা ভবিষ্যতে, সত্যের পথ থেকে কখনো সরে যেও না।”
রোববার বিকেল চারটায় পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ির নাটমন্দিরে বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জী স্বামীজীর কর্মজীবনের উপলব্ধিমূলক ওইসব গুরুত্বপূর্ণ উক্তি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক তপন শীল স্বামীজীর রচনাবলীর অংশ বিশেষ তুলে ধরে বলেন, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের ভিতর যে পূর্ণতা আগে থেকেই বিদ্যমান, তারই প্রকাশ।
যে সময়ে কাজ করবেন বলে আপনি কথা দিয়েছিলেন, সেই কাজ সেই সময়ের মধ্যেই শেষ করুন। না হলে মানুষের বিশ্বাস আপনার উপর থেকে সরে যাবে। সারা দিন চলার পথে যদি তুমি কোন সমস্যার সম্মুখীন না হও, তাহলে বুঝবে তুমি ভুল পথে চলেছো।
বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক তপন শীলের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ, বিশেষ অতিথি বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের উপদেষ্টা দীনবন্ধু মিত্র, প্রাণকৃষ্ণ রায়, কলেজ শিক্ষক পবিত্র মোহন দাস, হিন্দু বিবাহ রেজিষ্টার নির্মল দাস, স্নিগ্ধা নাথ, সারদা সংঘের সভাপতি কল্যাণী রায় প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ইংরেজি ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি উৎসবের দিন উত্তর কলকাতা সিমলা অঞ্চলের ৩ নং গৌর মোহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রীটে নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে বীরেশ্বর ওরফে বিলে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল বিশ্বনাথ দত্ত ও মাতার নাম ভূবনেশ্বরী দেবী। বাবা কলকাতা হাইকোর্টের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। নরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ঠ লেখক। বিদেশ ভ্রমনে নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে স্বামীজির সফর সঙ্গী থাকতেন মহেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৮৮৬ সালের বড়দিনে নরেন্দ্রনাথ দত্তসহ আটজন শিষ্য আটপুরে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেন।
ধর্ম, দর্শণ, ইতিহাস, শিল্প, সমাজ বিজ্ঞান, সাহিত্য, এসব বিষয়ে অনন্ত জ্ঞান ছিল স্বামী বিবেকানন্দের। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই বেলুড় মঠে তাঁর প্রয়ানের এত বছর পরও তার চিন্তা ভাবনা ও উপদেশাবলী আজও আমাদের জীবনের পাথেও। স্বামীজীর বাণী আজো যুবসমাজকে উৎসাহ ও অনুেেপ্রেরণা দেয়। যে কারণে স্বামীজীকে যুব সমাজের আদর্শ বলে মনে করা হয়। স্বামীজীর জন্মদিন সারা ভারতবর্ষে যুবদিবস হিসেবে পালিত হয়। তিনি কেবল জগতে হিন্দু ধর্ম প্রচারন করেননি, ভারতকে দিয়ে গেছেন একটি নতুন ধর্ম। ওই ধর্মের নাম “সেবা ধর্ম”। জীব জ্ঞানে শিব সেবাই ছিলো তার বাণী। অনুষ্ঠান শুরুতেই স্বামীজীর স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের পক্ষ থেকে শতাধিক নারী ও পুরুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরুপ ঘোষ।