1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
নীরবে চলে গেল রাবি অধ্যাপক ডঃ আরিফুলের মৃত্যু দিবস - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন

নীরবে চলে গেল রাবি অধ্যাপক ডঃ আরিফুলের মৃত্যু দিবস

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৭৫৫ জন খবরটি পড়েছেন

মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ২০১৯ সালের  ১৮ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মহান আল্লাহ সুবহানুতায়ালার ডাকে সাড়া  দিয়ে চলে যান সেই পরম করুণাময়ের দরবারে। হ্যা,ফুটফুটে সুন্দর মিষ্টি মায়াবী চেহারার সেই ছেলেটি অধ্যাপক  ডঃ আরিফুল ইসলাম ।

বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের  খানপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান তিনি। দাদা মুন্সী রফিউদ্দীনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামের দুই ছেলের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন ডঃ আরিফুল ইসলাম। জহুরুল-কুলসুম দম্পতির ঘর আলোকিত করে ১৯৬৩ সালের ৫ জানুয়ারী জন্ম গ্রহন করেন আরিফুল । পিতা জহুরুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মা উম্মে কুলসুম একজন গৃহিনী ।

অধ্যাপক  ডঃ আরিফুল ইসলাম

দাদা মুন্সী রফিউদ্দীন ছিলেন স্থানীয় গ্রাম এলাকার এক অজন স্বনামধন্য সমাজপতি। সারা জীবন মানুষের শালিশ-বিচার করেছেন অত্যান্ত বিচক্ষনতার সাথে। সেই সাথে তিনি ছিলেন পার্শবর্তী গ্রাম ক্ষেত্রপালার এক মসজিদের ঈমাম। নিজ গ্রামের মসজিদেও কিছুদিন ঈমামতি করেন তিনি। নিজের কন্ঠ ছিলো সুমধুর তাই পৌত্র আরিফুল কে বানাতে চেয়েছিলেন মাওলানা । পৌত্র কে ভর্তি করেন নিজ গ্রামের মাদ্রাসায়। সেখানে অধ্যায়ন শেষে পৌত্র যেন সুললিত সুমধুর ক্লন্ঠে ইসলামের বাণী প্রচার করতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা নির্ধারিত করে রাখেন অন্য কিছু।

অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়ে সেখানের পাঠ চুকিয়ে গ্রামের খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন আরিফ। ১৯৯৭ সালে এসএসসি তে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮৯% নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপরে এইচএসসি ভর্তি হন যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে । ১৯৯৯ সালে ওই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৮১% নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন আরিফুল ইসলাম।  

জাপানে শিক্ষকের সাথে ডঃ আরিফুল ইসলাম

মেধাবী আরিফুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-ফার্মে ভর্তি হয়ে ২০০৫ সালে ৭৬% নম্বরসহ প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এম-ফার্মে ৭৯% নম্বর নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এম- ফার্ম পাশের পরে চট্টগ্রাম  ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ২ বছর শিক্ষকতার করেন। সেখান থেকে  ওয়ান ইলেভেনের পরে আরিফুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানরত ডঃ আরিফুল ইসলাম

এরপরে আরিফুল ইসলাম বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেন । স্ত্রী আইরিন সুলতানা মৌসুমী কম্পিউটার বিষয়ে উচ্চশিক্ষিতা। দাম্পত্য জীবনে তাদের সংসারে আসে একটি কন্যা সন্তান,উমাইয়া ইসলাম।

একমাত্র কন্যার সাথে ডঃ আরিফুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা অবস্থায় উচ্চতর শিক্ষা লাভ করতে তিনি জাপান গমন করেন। ২০১২ সালে টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফার্মেসী অ্যান্ড লাইভ সাইন্স থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ পেশায় মনোনিবেশ করেন। শিক্ষা লাভের উচ্চাকাংখায় আবারও তিনি জাপান গমন করেন । জাপানে নির্ধারিত একটি কর্স সম্পন্ন করে পূণরায় দেশে ফিরে কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন।

ক্ষণজন্মা এই মেধাবী তরুণ পিতা-মাতা-ভাই- স্ত্রী -সন্তানের মায়া কাটিয়ে ২০১৯ সালের  ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে প্রাতভ্রমনের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যূবরণ করেন।    

ডঃ আরিফুল ইসলাম এর প্রিয় ছাত্রের লেখা নীচে

*** আমার আরিফ স্যার ***

২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ বন্ধু হাসান আল বান্না ফোন করে বলল – আরিফ স্যার রি ইউনিয়ন এ আসবেন। এত অল্প সময়ের আমন্ত্রণে স্যার রাজশাহী থেকে আসবেন! আনন্দে বুক ভরে উঠল সাথে সাথে । রি ইউনিয়নের আমেজ আমি তখন থেকে ফিল করছিলাম।

সাথে সাথে স্যার কে ফোন দিলাম – ধন্যবাদ দিলাম।২২ ফেব্রুয়ারী সকাল বেলায় স্যার চলে আসলেন। কোট টাই পরা উজ্জ্বল একটা মানুষ ! দৌড়ে গিয়ে জরায় ধরলাম। পুরোনো স্বতেজ একতা প্রশান্তি পেলাম। স্যার আমারদের ভাই বলে সম্বোধন করতেন সবসময় – সেদিন ও বললেন “ভাই, কেমন আছ? তোমার মা চলে গেলেন , আমি শুনেছি- মন খারপ করোনা”। আবার ও জড়ায় ধরলেন আমাকে স্যার ।

২০০৭ সালের শেষের দিকে , আমরা তখন সেনেন্ড সেমিষ্টারে, একদিন ইজহার স্যার একজন ভদ্র, পরিপাটী লোক সাথে নিয়ে ক্লাসরোমে ঢুকলেন। ইজহার স্যার পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেই দিন প্রথম পরিচয় উনার সাথে আমাদের। আমাদের ফিজিউলজি পড়াতেন – অনেক ডিটেইলস এ। আমরা স্যারকে বলতাম সংক্ষিপ্ত করে পড়াতে , স্যার বলতেন – তোমরা কি গাইড বই স্টাইলে পড়বা?। আমরা বার বার বলতাম , স্যার রেগে বলতেন “সব রিপ্লেক্স গাইড এ আছে”। এই বাক্যটা নিয়ে আমরা মজা করতাম অনেক। ভিতরে রাগ নিয়ে এই কথাটা বলতেন , কিন্তু চেহেরায় তা প্রকাশ করতেন না। স্যার চাইতেন আমরা রেফারেন্স বই গুলো পড়ি, নোট করি।

এভাবে দিন যত যায় – স্যারের সাথে আমাদের দূরত্ব কমতে থাকল । স্যারের একটা বিশেষ ক্ষমতা ছিল – আমাদের ভিতরের প্রবলেম উনি বুঝতে পারতেন – লেকচার দেয়ার সাথে সাথে সবাইকে উনি গভীর ভাবে খেয়াল করতেন – তারপর কাউন্সেলিং করতেন আলাদা আলাদা। স্যারকে একদিন আমি জিজ্ঞেস করলাম – আপনি আমার এই সমস্যাটা খেয়াল করলেন কিভাবে ? স্যার বললেন “তুমি আমার ছোট ভাই” । আমি অবাক হলাম এই ভেবে – স্যারের সাথে আমার দূরত্ব ছিল সবচেয়ে বেশী। সেদিনের পর থেকে স্যার কে আমি কাছে পেয়েছি অবিরাম – যেকোন প্রয়োজনে,যে কোণ সমস্যায় আমি স্যারকে বিনা সংকোচে বলতাম। এভাবে উনি সবার সাথে মিশেছেন।

রাঙ্গামাটি ট্যুর এ স্যারের সাথে আমাদের সখ্যতা বেড়ে যায় অনেকাংশে।এভাবে তিনটা বছর চলে যায়। আরিফ স্যার এবং রফিক স্যার একসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন। ১১ জানুয়ারী ২০১০ চট্রগ্রাম ছাড়েন স্যার। সারাদিন স্যারের বাসায় ছিলাম , সবকিছু গুছিয়ে দিলাম আমরা। A3, A4 দুটা সিট কাটা হল স্যারদের জন্য, সন্ধ্যায় স্যারদের বাসে তুলে দিলাম। তারপর আমি আর বান্নাহ হোস্টেলে চলে আসলাম – বসে ছিলাম টিভি রোমে। মনটা ভিষন খারাপ আমাদের। বান্নাহ বলল “সবাই চলে যাচ্ছেরে। আগে গেল মোতাহার স্যার, এখন আরিফ স্যার, রফিক স্যার- যারা আমাদের বটগাছ -তারা চলে যাচ্ছে – কি হবে আমাদের!

”সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯। সকালে ৭ টার দিকে ফেবুতে ডুকলাম – আবু সায়ীদ স্যারের পোস্ট চোখে পড়তেই চোখ ঘোলা হয়ে গেল। বিশ্বাস করতে পারছিনা। অঝোরে কান্না চলে আসল অজান্তে। বান্নাহ ফোন দিল “সবাই চলে যাচ্ছেরে। আগে গেল মোতাহার স্যার, এখন আরিফ স্যার- যারা আমাদের বটগাছ তারা চলে যাচ্ছে – কি হবে আমাদের!”কাজে ছিলেন স্যার কর্মঠ , চলতেন ঘড়ির কাটায় কাটায়, পড়ীক্ষার হলে স্যার একদম মেলেটারী।

স্যার আমার কাছে একটা বই। প্রতিটা পাতায় পাতায় স্যারের উত্তম গূনাবলী। যতই উনাকে দেখেছি ততই শিখেছি। প্রতিটা দিনেই উনি লিখে গেলেন আমাদের জন্যে। কিন্তু এত অল্পে লিখা শেষ হয়ে যাবে! কল্পনাতেও ভাবিনি। কখনো ভাবিনি – শেষ দেখা – শেষ রি ইউনিয়ন -স্যারের সাথে – ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯। আল্লাহর উত্তম আদেশ, উত্তম ইচ্ছায় স্যারের জীবনের সলীল সমাধি। করজোড়ে একটায় চাওয়া – স্যারের জন্যে যেন আল্লাহ উত্তম জান্নাতের স্বাদটুকু দিবেন। সবাই এই “সত্যিকারের ভাল মানুষটার” জন্যে দোয়া করবেন।

(২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর লেখা ফুয়াদ মোহাম্মদ ফহাদের ফেসবুক থেকে নেয়া )

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews