ডেস্ক নিউজ।
বাংলাদেশে ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তারের পেছনে একটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী চক্রের জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে এই চক্র পরিকল্পিতভাবে ইয়াবার বিস্তার ঘটিয়েছে, যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করা এবং অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চক্রের অন্যতম সদস্য কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। এছাড়া, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক শহিদুল হক এই মাদক-সন্ত্রাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তারা ইয়াবা ব্যবসা থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি, এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযোগকারীদের ধমক দেন বলে জানা গেছে। যার ফলে মাদক-সন্ত্রাসে তার নীরব সম্মতি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এই চক্রের বিষয়ে মুখ খোলায় আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা মাফিয়া হাজি সাইফুল আলমকে প্রাণ দিতে হয়েছে। পুলিশের ‘সেফ হোম’-এ থাকার সময় তাকে পরিকল্পিতভাবে বের করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হলেও মূল গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মাদক কারবারে জড়িত থাকার কারণে আবদুর রহমান বদি এবং তার স্ত্রী যাতে মনোনয়ন না পান, সেজন্য তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খানের হস্তক্ষেপে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এছাড়া, টেকনাফে কর্মরত দুই সাবেক ওসি জানিয়েছেন, সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবার কমিশন নিয়মিতভাবে বদি ও শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছাতো। মাদক নির্মূলের নামে যে অভিযান চালানো হয়েছে, তা ছিল লোকদেখানো। স্থানীয় পাচারকারীদের গ্রেফতার করা হলেও আসল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বারবার বাধা দেওয়া হতো।
এই পরিস্থিতিতে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, উচ্চপর্যায়ের কেউ জড়িত না থাকলে বদিকে শাস্তির বদলে মনোনয়ন দেওয়া হতো না। তিনি বলেন, ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন আবদুর রহমান বদি। তবে তিনি এককভাবে এটি করেননি, তার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, শুধু বদি নন, মাদক নির্মূলকারী ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচার করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অভিযুক্তদের মধ্যে আবদুর রহমান বদি ও শহিদুল হক কারাগারে থাকলেও ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামাল আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।