শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিবেদক।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা উপকূলীয় এলাকা কৈখালীতে রাতের অন্ধকারে ছয় বিঘা জমিতে লাগানো তরমুজ গাছ উপড়ে দিয়েছে বুর্বৃত্তরা।
ফসলের ক্ষেতজুড়ে সবুজ লতায় মোড়ানো তরমুজ গাছে কেবল ফুল ফুটেছে। আবার কোন গাছে ধরেছে ছোট ছোট ফল। সেই ফল দেখেই বুকে স্বপ্ন বেঁধেছিল কৈখালী এলাকার কৃষক রাশিদুল ইসলাম ও ওমর ফারুক। তারা ভেবেছিলেন ভালো লাভবান হবেন, করবেন ঋণ পরিশোধ। কিন্তু এক রাতেই তাদের সব স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়েগেলো। গভীর রাতে কৃষক রাশিদুল ইসলাম ও ওমর ফারুকের ক্ষেতের প্রায় ১৮ হাজার তরমুজ গাছের মধ্যে অর্ধেকর বেশি গাছ উপড়ে নষ্ট করে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার রাতের কোন একটি সময় ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের শৈলখালীর পশ্চিম কৈখালী গ্রামে। শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষক ওমর ফারুকের এ ক্ষতির কথা শুনে ক্ষেতে এসে ভিড় করেছেন স্থানীয় লোকজন। আক্ষেপ করছেন উপড়ে ফেলা তরমুজ গাছ দেখে। এই ক্ষেত দেখে বোঝা যায় একেকটি গাছ টেনে টেনে উপড়ে ফেলা হয়েছে। সেই গাছের কোনটিতে ফুল এসেছে। কোনটিতে ধরেছে ফলও।
স্থানীয় তরমুজ চাষীরা জানান, দীর্ঘ ৯/১০ বছর ধরে কৈখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কৈখালী গ্রামের বাসিন্দা রাশিদুল ইসলাম ও ওমর ফারুক দু’জনে তরমুজ আবাদ করছেন। বছরে তাঁদের আয়ের উৎস এই তরমুজই। তাই প্রতিবছর এইসময়েরই অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এবারও ছয় বিঘা (২০০ শতাংশ) জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন তিনি। কিন্তু দুর্বৃত্তরা ওমর ফারুকের সেই স্বপ্নকে শেষ করে দিয়েছে। তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাশিদুল ইসলাম ও ওমর ফারুকসহ তাঁদের পরিবার। তরমুজ চাষীরা বলছেন, রাশিদুল ইসলাম ও ওমর ফারুকের প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পশ্চিম কৈখালী এলাকার হযরত আলী গাইনের ছেলে ওমর ফারুকের (৪২) বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম করে আমরা ক্ষেতটা করিছি (করছি)। আমাদের সব স্বপ্ন মাটি হুয়ে (হয়ে) গেলো। আমরা তো কারোর ক্ষতি করিনি, আমাদের তো কারও সঙ্গে তেমন কোন শত্রুতা নেই। সকালে ক্ষেতে আইসে (এসে) দেখি খ্যাতের (ক্ষেতের) গাছ উপড়ে ফিলেছে।’
মৃত হামিদ উদ্দিন গাজীর ছেলে রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গাছগুলো ভাল হুয়েছে (হয়ছে), এইটা দেখেই পাশের লোকজন আমার এই ক্ষতিটা করছে মনে হয়। আমরা কিভাবে এই ক্ষতি পোষাবো?। ধারদেনা করে খ্যাতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। এখন কিভাবে এই দেনা পরিশোধ করবো?। আমরা এর বিচার চাই।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। একজন কৃষকের পরিশ্রমের ক্ষেত এভাবে যারা নষ্ট করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হুমায়ুন কবির মোল্যা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’