বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় একজন প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক— বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে হয়। কিন্তু এসব ধাপ পেরিয়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ‘বিসিএস ক্যাডার’ সমমান পেয়ে যাচ্ছেন বলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশল পেশায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিএসসি ও ডিপ্লোমা ধারী— দুই পক্ষই নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে নবম গ্রেডের পদটির যোগ্য বলে দাবি করছেন। এতে অন্তত পাঁচটিরও বেশি সরকারি দপ্তরের নবম ও দশক গ্রেডের দুই পদ নিয়ে গভীর সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি নেওয়া পক্ষ বলছে, টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার বা প্রকৌশলীর সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য তৈরি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা এখন সরাসরি ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পরিচয়ে চাকরি করছেন। এমনকি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই কেবল পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়ে তারা বিসিএস ক্যাডার সমমানের ৯ম গ্রেডের পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। এ ছাড়া স্বাভাবিক নিয়োগ না দিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নবম গ্রেডের পদগুলো ব্লক করে রাখার অভিযোগও করেছেন তারা।
যদিও পলিটেকনিকের ডিপ্লোমাধারীরা এসব অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বলছেন, দশম গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে তারা স্বাভাবিক নিয়মেই নবম গ্রেড পাচ্ছেন। এটা তাদের অধিকার। প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে এন্ট্রি পোস্ট দুটি। উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) এবং সহকারী প্রকৌশলী (৯ম গ্রেড)। ১০ম গ্রেড অফিসার পোস্ট উপসহকারী প্রকৌশলী পদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরধারীদের আবেদন করতে দেওয়া হয় না। শুধু পলিটেকনিক থেকে পড়ুয়া ডিপ্লোমাধারীদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ দশম গ্রেডের প্রকৌশল কর্মকর্তা পদে ১০০ শতাংশ কোটা নিয়ে রেখেছেন ডিপ্লোমাধারীরা। অথচ সারা দেশের ১০ম গ্রেডের জেনারেল পদের সর্বনিম্ন যোগ্যতা চাওয়া হয় স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা অন্যান্য সব সেক্টরের ১০ম গ্রেডে আবেদন করতে পারলেও নিজ সেক্টরে আবেদন করতে পারছেন না। এতে বেকারত্ব হতাশা যেমন বাড়ছেই, তেমনি দেশ থেকেও মেধাবীরা চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ও দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ সালের গেজেটে ডিপ্লোমাধারীরা সুপারভাইজার বা টেকনিশিয়ান হিসেবে বিবেচিত হতেন। ২০১৩ সালে আন্দোলনের পর পদটি দশম গ্রেডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এরপর থেকে ডিপ্লোমাধারীদের বিভিন্ন সংগঠনের তৎপরতায় নবম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী পদে সর্বনিম্ন ৩৩ শতাংশ কোটা প্রথা চালু করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ৫০, ৬৭ এমনকি ১০০ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়।