শীতের শুরুতেই খেজুরের রস-গুড় তৈরীর জন্য গাছের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ইতোমধ্যেই খেজুর গাছ কাটা শুরু করেছেন গাছিরা। খেজুরের রস-গুড়-পাটালির স্বাদ নিতে উদ্গ্রীব মানুষের কাছে ইতোমধ্যেই পৌছাতে শুরু করেছে রস-গুড়-পাটালি। খেজুর রস দিয়ে নতুন ধানের চালের গুড়ার পিঠা -পায়েস খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রামের মানুষেরা।
যশোরের যশ খেজুরের রস- গুড়ের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রশাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য কৃষিবিভাগ গাছিদের প্রশিক্ষন দেয়াসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রস-গুড়ের ভান্ডারখ্যাত যশোরের নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে রস আহরণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। গুড় উৎপাদনকারী একাধিক গাছিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে এ এলাকার খেজুরের রস ও গুড়কে লাভজনক অর্থনৈতিক খাত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নির্ভেজাল খেজুরের রস-গুড় তৈরির লক্ষ্যে যশোরের ৩০ জন গাছিকে ইতোমধ্যে ৩ দিনের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে ।
সূত্র আরোও জানায় , প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া গাছিদের আধুনিক পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ গুড় উৎপাদন পর্যন্ত যে যে উপকরণ লাগবে তা বিনামূল্যে দেয়া হবে। সারা দেশের মধ্যে যশোরে এ ধরনের বিশেষ প্রশিক্ষণ ও গাছিদের মধ্যে উপকরণ সরবরাহের উদ্যোগ এ প্রথম বলে তিনি জানান।
যশোরের খেজুর গুড়ের চাহিদা দেশে ও বিদেশে বেশি থাকায় এখানে বিশুদ্ধ গুড়ের বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ।
সূত্রে জানা গেছে , যশোর জেলায় মোট খেজুর গাছের সংখ্যা ১৬ লাখ ৪১হাজার ১৫৫টি।এর মধ্যে রস উৎপাদিত হয় এমন খেজুর গাছের সংখ্যা ৩লাখ ৪৯হাজার ৯৫৫টি।এসব খেজুর গাছ থেকে বছরে ৫কোটি ২৪লাখ ৯৩হাজার ২৫০ লিটার রস উৎপাদিত হয়।বছরে গুড় উৎপাদিত হয় ৫২লাখ ৪৯হাজার ৩২৫ কেজি। যার মূল্য একশ কোটি টাকার উপরে। বর্তমানে যশোরের ৮ উপজেলায় গাছির সংখ্যা ১৩হাজার ১শ’৭৩জন।
যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর গ্রামের গাছি আব্দুল আলীম জানান,প্রায় ২০ বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িয়ে আছি। মৌসুমের শুরুতে রস-গুড় তৈরি করি।
এখানকার খেজুর গুড়ের চাহিদা দেশ-বিদেশে সর্বত্র রয়েছে। একসময় বাঘারপাড়া- খাজুরা অঞ্চলে প্রচুর খেজুরের গাছ ছিলো। রস-গুড়ের মৌসুমে ঘরে ঘরে চলতো রস-গুড়ের কর্মকাণ্ড। শীতের পিঠা-পুলি , সকালে রস-গুড়-পাটালি দিয়ে চিড়া-মুড়ি না খেলে দিনের কাজকর্ম শুরু হতোই না। যদিও বর্তমানে আগের তুলনায় গাছ অনেকটা কমে যাওয়ায় এসকল কর্মকান্ড ও উল্লেখযোগ্যভাবে চোখে পড়েনা।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ জানান, বাঘারপাড়া উপজেলায় গত বছর ৬০ জন গাছি নিয়ে একটি সংগঠন করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও উৎসাহ বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সড়কের পাশে খেজুরের চারা রোপণ করা হয়। আগামীতে সে গাচ গুলো থেকে রস সংগ্রহ করা যাবে।
বাঘারপাড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২৬৫ হেক্টর জমিতে ৯২ হাজার ৭৫০ টি খেজুর গাছ রয়েছে। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে নতুন করে খেজুরের চারা গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়ায় গাছিদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।